চরবাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়- অনন্য বিদ্যাপীঠ

, ফিচার

ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2023-10-09 03:11:36

নোয়াখালীর দক্ষিণে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মাঝে অবস্থিত সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক জাগ্রত মহীরুহ। এটি ১৯৪২সাল থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে জ্বলছে।

কোভিড -১৯ এর প্রকোপে গত ২ বছর বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরে এবার আবারও বিগত বছরের মতো জাঁকজমকপূর্ণ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ৯৮ টি ইভেন্টের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের ১৫টি ইভেন্টের পুরস্কার দিয়ে সহযোগিতা করেন এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এম শাখাওয়াত উল্যাহ। তিনি শিক্ষার্থীদের পুরস্কার হিসেবে বই দিয়ে বই পড়ার অভ্যাস সৃষ্টির প্রয়াস নেন।

পুরস্কার পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা

উল্লেখ্য, এই বিদ্যালয় হতে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ইভেন্টে উপজেলা, জেলা, বিভাগ এমনকি জাতীয় পর্যায়েও কৃতিত্বের সাথে প্রতিযোগী অংশ নিয়েছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রমের পাশাপাশি এখানে নিয়মিত সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়।

বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৫শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের আঙিনার ২০০ গজের মধ্যে একটা কিন্ডারগার্টেন, ৪০০ গজের মধ্যে ২টি মাদ্রাসা থাকা সত্ত্বেও এই বিদ্যালয়ে এই বছর ১২০জন নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে যা আশেপাশের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ। কোভিড সংকট পরবর্তী সময়ে অনেক বিদ্যালয়েই শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিলেও এখানে তা দেখা যায় নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আমরা কোভিডের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলাম, তখন সপ্তাহে একদিন করে পড়া দিতাম মেসেজে, একদিন করে কল করে পড়া নিতাম। আবার, অনলাইন ক্লাস শুরু হলে গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থীকে সংযুক্ত করেছি। নিয়মিত গুগল মিটে ক্লাস নিয়েছি, যাতে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা অফিসার, ইন্সট্রাক্টর মহোদয় অংশ নিয়ে তদারকি করেছেন।’’

তিনি বলেন, এছাড়াও, এন্ড্রয়েড ফোন যাদের আছে তাদের সবাইকে ক্লাসভিত্তিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করে নিয়েছি যাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়। আমাদের প্রতিটি শিক্ষকের নিকট বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর ফোন নম্বর রয়েছে। আমরা নিয়মিত ফোনে খোঁজ নিয়েছি, হোমভিজিট করেছি, এসাইনমেন্ট বাড়িতে দিয়ে এবং প্রতিটি প্রান্তিক মূল্যায়নের প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দিয়েছি। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের ঝরে পড়া শিক্ষার্থী নেই।

তিনি আরও বলেন, "শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক এই ত্রয়ীর মাঝে সহজ, সুন্দর বোঝাপড়াতেই সম্ভব শিক্ষার সুষ্ঠু উন্নয়ন। কোভিডকালীন সময়ে আমরা তা আরও বেশি অনুধাবন করেছি। দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধের ফলে শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের যেন দূরত্ব সৃষ্টি না হয়, সেজন্য শিক্ষককে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হয়েছে। বর্তমানেও শিক্ষক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যোগাযোগ বাড়ালে সম্পর্ক সহজ থাকবে। এতে অভিভাবকের সচেতনতা বাড়ার পাশাপাশি বিদ্যালয় ও পড়াশুনার ব্যাপারে শিক্ষার্থীর আগ্রহ বজায় থাকবে, "ঝরে পড়া" রোধে সহায়ক হবে। আমরা এই বিশ্বাস নিয়েই কাজ করি।"

জাতীয় দিবসগুলোতে থাকে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ

 বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা জানতে গিয়ে জানা যায়, এখানে শিক্ষার্থী অনুযায়ী শিক্ষক সংকট রয়েছে। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত যেসব বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিক ২বছর করে চালু করেছে, চরবাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তার একটি। শিক্ষার্থী অনুযায়ী শ্রেণীকক্ষ অপ্রতুল, ফলে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হয় যা শ্রেণী শৃঙ্খলা বজায় রেখে যথাযথ পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটায়। বিদ্যালয়টি ৭টি শ্রেণীকক্ষ ও ১০জন শিক্ষক নিয়ে এক শিফটে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে শাখা বিভাজন করে পাঠদান করার মতো শ্রেণীকক্ষ ও শিক্ষক নেই।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান যে, নতুন ভবন ও শ্রেনীকক্ষের জন্য জেলা - উপজেলা পর্যায়ে প্রসাশনিক ও রাজনৈতিক ভাবে আবেদন করেও কোনো ফল হয়নি। বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার্থী অনুযায়ী ২জন শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করলে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম আরও গতিশীল, ফলপ্রসূ হবে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আশা করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের কাব স্কাউটস

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বৃত্তি লাভ এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে উপজেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক এ প্লাস এই বিদ্যালয় থেকে পায়। যার ফলশ্রুতিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য অভিভাবকসহ বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে।

দুপুরের খাবার তথা "মিডডে মিল" এ স্কুলের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে প্রথম শুরু হয় যা পরবর্তীতে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্যালয়টি বরাবরের মতো বিভিন্ন ইনোভেটিভ কার্যক্রম দিয়ে এলাকায় সুপরিচিত। বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় শিক্ষকের ব্যবস্থা করলে একদিন এটি পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে বলে স্থানীয় মানুষদের বিশ্বাস।

এ সম্পর্কিত আরও খবর