সুলতানি স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন অষ্টগ্রামের কুতুব শাহ মসজিদ

, ফিচার

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-10-14 15:12:07

প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার কুতুব শাহ মসজিদ। এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদের গায়ে কোন শিলালিপি না থাকলেও এর স্থাপত্যরীতি দেখে এটিকে ১৬শ শতকে সুলতানি আমলে নির্মিত বলে অনুমান করা হয়। কোন কোন ঐতিহাসিক এটিকে ১৭শ শতকের শুরুতে বলে ধারণা করেন।

১৯০৯ সালে তৎকালীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এটিকে সংরক্ষিত হিসেবে নথিভুক্ত করে।

ইয়ামেন থেকে আগত বিখ্যাত দরবেশ কুতুব শাহ’র নামানুসারে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়। মসজিদের পশ্চিমপাশে এই দরবেশের কবর অবস্থিত। মসজিদের দক্ষিণ পাশে আরও ৪টি কবর দেখা যায়। এগুলো তার সঙ্গীর কবর বলে ধারণা করা হয়।


মসজিদটি আয়তাকার। এটি উত্তর-দক্ষিণে ৪৬ ফুট ১১ ইঞ্চি এবং পূর্ব -পশ্চিমে ২৭ ফুট ১১ ইঞ্চি। বাংলার চৌ-চালা ঘরের চেয়েও এর কার্ণিশগুলি অধিক বক্রাকার। এর চারকোনে অষ্টকোনাকৃতির চারটি মিনার রয়েছে। বাহিরের দেয়ালে প্যানেলিং এর কারুকার্য রয়েছে। এর পূর্ব দেয়ালে ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ২টি করে ৪টি সর্বমোট ৭টি সুলতানি খিলানযুক্ত প্রবেশ পথ রয়েছে।

মসজিদটিতে ৫টি গম্বুজ রয়েছে। পূর্ব দেয়ালের প্রবেশ পথের বিপরীতে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব রয়েছে। এগুলো সর্পিল নকশাবিশিষ্ট অলঙ্করণ দ্বারা সজ্জিত। এখানে ব্যবহৃত অর্ধচন্দ্রাকৃতির একটি টেরাকোটার নকশা এ মসজিদের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।


মসজিদটির অবস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর বেষ্টিত উপজেলা অষ্টগ্রামে। ঢাকা কিংবা দেশের যে কোন স্থান থেকে বাস কিংবা ট্রেনযোগে কুলিয়ারচর আসতে হবে। সেখান থেকে রিক্সা অথবা অটো রিক্সায় কুলিয়ারচর লঞ্চঘাটে আসতে হবে। সেখান থেকে লঞ্চে কিংবা স্পীডবোটে করে অষ্টগ্রামে আসতে হবে। লঞ্চে ১৫০ টাকা ও স্পিডবোটে ৩০০ টাকা করে ভাড়া লাগবে। লঞ্চে পৌনে ৩ ঘণ্টা থেকে ৩ ঘণ্টা ও স্পীডবোটে ৪৫ মিনিট সময় লাগবে। অষ্টগ্রামে নেমে ২৫ টাকা করে অটো ভাড়া দিয়ে মসজিদের যাওয়া যাবে।

অষ্টগ্রামে হাওরের ভিতর দিয়ে রাস্তা, সাবেক প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের বাড়ি, মিঠামইনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট ও কুতুব শাহ মসজিদ ছাড়া দেখার তেমন কিছুই নেই। সেখানে থাকার ব্যবস্থায় তেমন ভাল নয়। তার দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা ভাল হবে। তবে রাত্রে থাকতে চাইলে ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন। হাওরের পাশে বসে জ্যোৎস্না বেশ উপভোগ্যই হবে।


দুপুরে ফুড ব্যাংক রেস্টুরেন্ট হাওরের তাজা মাছ ও হাঁসের মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। তাদের পরিবেশ ও খাওয়ার মানটা বেশ ভাল। শুক্রবার ও শনিবার এদের কমন মেন্যু থাকে। অন্যান্য দিন পছন্দমতো অর্ডার দিয়ে রান্না করিয়ে নেওয়া যায়। সকালের নাস্তা ও রাত্রের খাবারের জন্য আগেই বলে রাখতে হবে।

ঢাকা থেকে ডে ট্যুরের জন্য একটি আদর্শ স্থান হচ্ছে অষ্টগ্রাম-মিঠামইন। ভরা বর্ষার সময় হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এসময় হাওরে লঞ্চ বা স্পীডবোটে ভ্রমণ, হাওরের ভেতরের পাকা রাস্তা, হাওরের তাজা মাছ ও হাঁসের মাংস আপনার মন কাড়বে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর