বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান বেধেছেন প্রতিবন্ধী রিকশাচালক মোস্তফা

, ফিচার

কল্লোল রায়, স্টাফ করেসপন্ডেণ্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-10-16 17:49:02

ছিল সুখের একটি সংসার। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভালোই দিন কাটত তাঁর। ১৫ বছর আগে বাবা-মা পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার কিছুদিনের মাথায় সড়ক দূর্ঘটনায় ডান পা হারিয়ে ফেলেন তিনি। এরপর সন্তানকে নিয়ে স্ত্রীও তাঁর সঙ্গ ছেড়ে দিয়ে চলে যান বাবার বাড়িতে। অবশিষ্ট বাম পায়ের আঙ্গুলে পচন ধরেছে। কবিরাজের ওষুধ আর ব্যান্ডেজ করে ব্যাথা নিয়েই চলছেন। নিজের জন্য দুমুঠো ভাত জোগার করতে ঢাকায় এসেছেন ব্যাটারিচালিত রিক্সা চালাতে। এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গানও লিখেছেন তিনি, গানটির সুরও তাঁর করা!

বলছি রাজধানী শহরের মিরপুর-১২ এলাকার বাসীন্দা মোঃ মোস্তফার (৩৬) কথা। গ্রামের বাড়ি রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা রিজাব বাজারে। এসপি বাংলা এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের সন্তান তিনি। মিরপুর ১২ এর 'দ' ব্লোকের ১৬নং রোডে একাই বসবাস করছেন তিনি। 

সোমবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে তাঁর সাথে বার্তা২৪.কমের প্রতিবেদকের দেখা হয় কাজিপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের নীচে। বাম পায়ের ইনফেকশনের ব্যাথায় রিক্সা চালাতে না পেরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মোস্তফা। পাশাপাশি ফুটপাতের একটা দোকান থেকে ১০ টাকার একটি সিঙ্গারা নিয়ে ক্ষুধা নিবারন করছিলেন। তখনই কথা হয় তার সাথে। 

তিনি বলেন, পৃথিবীতে এখন আমার কেউ নাই। আমি একাই। ডান পা হারানোর পর স্ত্রী ভেবেছিল আমি ভিক্ষা করে খাব। তাই আমাকে ছেড়ে মেয়ে সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে। কিন্তু আমি ভিক্ষা করার মানুষ না। যতদিন জীবিত আছি, কিছু করে খেতে চাই। ২ মাস হলো ঢাকায় এসেছি। এর আগে আরও একবার এসে রিক্সা চালাতাম। ১০ বছর আগে নিজ জেলা রাঙ্গামাটি গিয়ে বাসের সুপারভাইজার এর কাজ করি। বাসের চাকার নীচে পা চাপা পরে আমার ডান পা চলে যায়। সেই ধাক্কা কেটে ওঠার পর ঢাকায় এসে ব্যাটারি চালিত রিক্সা ভাড়ায় নিয়ে চালাচ্ছি। রিক্সার মালিককে প্রতিদিন ৪০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। এর বাইরে যা আয় হয়, তা দিয়ে নিজে চলি। ভালোই চলছে। তবে ডান পা নিয়ে চিন্তায় আছি। ডাক্তার কেটে ফেলতে বলেছে। কিন্তু একমাত্র বাম পা টা হারাতে চাচ্ছি না। কবিরাজি ওষুধ খাচ্ছি, দেখি কী হয়।

 ডাক্তার বলেছে পা কেটে ফেলতে

তিনি আরও বলেন, আমি গরীব মানুষ। চাহিদা কম, আয়ও কম। আমি বেশ সুখেই আছি। এভাবে দিন চললেই আমি খুশি। গতকাল (রোববার) ইনকাম হয়েছে ৬৭০ টাকা। মালিককে ৪০০ টাকা দিয়ে নিজের কাছে ছিলো ২৭০ টাকা। আজকে দুপুর পর্যন্ত ৩৫০ টাকা ইনকাম হয়েছে। সারাদিনে ৮০০ টাকার মতো আয় হতে পারে। মালিককে দিয়ে নিজের কাছে যেটা থাকবে এতেই আমার ৩ বেলা খাওয়ার টাকা হয়ে যাবে। সব রাস্তায় ব্যাটারির রিক্সা ঢুকতে দেয় না। তাই একটু কম ইমকাম হয়।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান লেখার ব্যপারে মোস্তফা বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর একজন ভক্ত। তিনি না থাকলে আজ আমরা স্বাধীনভাবে চলতে পারতাম না। আমি বেশ কয়েকটি গান লিখেছি। সুরও করেছি। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা গান আছে। গানটি আমি সুযোগ পেলেই গেয়ে শোনাই। আমি চাই আমার গানটি দেশ ও বঙ্গবন্ধুর স্বার্থে কেউ সংগ্রহ করুক। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে গানটি গেয়ে শোনালেন তিনি। এসময় চট্রগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা এই গানটি শুনতে পথচারীরা ভীড় করেন মোস্তাফার রিক্সার পাশে। 

তিনি আরও বলেন, ১০ বছর আগের ঢাকা এবং এখনকার ঢাকা রাত-দিন পরিবর্তন হয়েছে। অনেক উন্নয়ন হয়েছে। যে কেউ আসলে অবাক হয়ে যাবে। এজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। 

নিজের পরিবারের সদস্যরা কেউ না থাকায় পরিবারের বাকি সদস্যদের সাথেও যোগাযোগ নেই মোস্তাফার। নেই ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও। তিন বেলায় শহরের কম মূল্যের খাবারের দোকানগুলোই আহারের ঠিকানা তাঁর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর