সুতানুটি, কলকাতা ও গোবিন্দপুর গ্রাম তিনটি ক্রয়ের খবর লন্ডনে কোম্পানির সদর দফতরে পৌঁছালে কোম্পানির বড় কর্তারাও নড়েচড়ে বসেন। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বাংলা অঞ্চলে কোম্পানির এইসব সাফল্যকে ছোটভাবে না দেখে কোম্পানি পৃষ্ঠপোষকতা করে। এ লক্ষ্যে তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে কলকাতাকে কেন্দ্র করে একটি প্রশাসনিক কাঠামোও সাজিয়ে ফেলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তদুপরি ১৬৯৯ সালে কোম্পানির সর্বোচ্চ পরিষদ ‘কোর্ট অব ডিরেক্টরস’ কলকাতাকে আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট তথা ‘প্রেসিডেন্সি’ ঘোষণা করে সেখানে নিম্নরূপ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়:
“Calcutta should be advanced to the dignity of a presidency that the President should draw a salary of Rs. 200/- per month with an additional gratuity of Rs. 100/- that he should be assisted by a Council of 4 members; of whom the first should be the Accountant, and the second the Warehouse Keeper, the third the Marine Purser; and the fourth the Receiver of the Revenues.”
১৭০০ সালের ২৬ মে কলকাতায় কোম্পানির প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্ত হন স্যার চার্লস আয়ার। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, জব চার্নকের মৃত্যুর পর থেকেই তিনি কলকাতা তথা বাংলায় কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষণ ও বিকাশে বিশেষ তৎপরতা প্রদর্শন করেন। তবে তিনি ১৬৯৯ সালে ইংল্যান্ডে ফিরে যান এবং পুনরায় ১৭০০ সালে ফিরে এসে প্রেসিডেন্ট হন। স্বাস্থ্যভঙ্গের কারণে সাত মাস পরেই তিনি আবার ইংল্যান্ডে ফিরে যান।
চার্লস আয়ার চলে গেলে প্রেসিডেন্ট পদে কলকাতায় তার স্থলাভিষিক্ত হন জন বেয়ার্ড। এভাবেই কলকাতাকে ঘিরে চলতে থাকে ইংরেজেদের শক্তি সঞ্চয় ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের ধারা। পরবর্তী কোম্পানির প্রশাসকগণ জব চার্নকের স্বপ্নকে তিলে তিলে গড়ে তুলতে থাকেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাদ্রাস থেকে এসে স্যার জন গোল্ডসবরো ১৬৯৩ সালে যে স্থানটি দুর্গ নির্মাণের উপযুক্ত বলে স্থির করেছিলেন, তা ডিহি কলকাতার মধ্যে অবস্থিত। সেই সময় কলকাতা ইত্যাদি গ্রাম সাধারণভাবে সুতানুটি বলেই পরিচিত ছিল। তখনও কলকাতা নামটি কাগজেপত্রে বা লোকমুখে প্রতিষ্ঠা পায়নি।
১৬৯৩ সালে শুরু হয়ে ১৬৯৮ সালে দুর্গটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। ১৬৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর ‘কোর্ট অব ডিরেক্টরস’ এক পত্রে দুর্গের নাম ‘ফোর্ট উইলিয়াম’ রাখার নির্দেশ দেয়। চিঠিতে আরও বলা হয় যে, “We approved of the fortification, you have made, and wish you to strengthen it by degrees as you can without any public offence to the Country or the great men.”
প্রাথমিক অবস্থাতেই দুর্গের মধ্যে একটি ভালো হাসপাতাল, সৈন্যদের বাসস্থান প্রভৃতি নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়। কোম্পানির অনুদানে এবং ইংরেজ কোম্পানির সদস্য ও খ্রিস্টান জনসাধারণের চাঁদায় একটি গির্জাও নির্মাণ করা হয়। ‘সেন্ট অ্যান’ নামে গির্জাটি নামাঙ্কিত হয়। ৯ মে ১৭০৯ সালে বিশপ অ্যান্ডারসন এটির উদ্বোধন করেন।
বলা নিষ্প্রয়োজন যে, কোম্পানি মুখে যাই বলুক না কেন, দুর্গ, হাসপাতাল, সেনাবাস, গির্জা ইত্যাদির মাধ্যমে শুধু ব্যবসা নয়, শুরু থেকেই তারা কলকাতাকে কেন্দ্র করে ভিন্ন মতলব নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। আর্থ-সামাজিক ক্ষমতা দৃঢ়করণের পাশাপাশি সামরিক শক্তিও সঞ্চয় করছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, যা চূড়ান্ত সাফল্য পায় অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব হাসিলের মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: জব চার্নকের কলকাতা
আরও পড়ুন: সুতানুটি থেকে কলকাতা