অক্ষয়কুমার দত্ত : বাংলায় নবজাগরণের আরেক দিকপাল

, ফিচার

সানজিদা আমীর ইনিসী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 12:05:23

ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে সমাজ সংস্কারের জন্য কৃতী মনীষীদের আবির্ভাবকে বাংলার নবজাগরণ বলা হয়। রাজা রামমোহন রায়ের সময় থেকে এই নবজাগরণ শুরু হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল পর্যন্ত এর সময়সীমা ধরা হয়। বাঙালির মধ্যযুগের অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ের অবসান ঘটিয়ে আধুনিক যুগে পদার্পণ হয় নবজাগরণের ফলে। তখনকার কৃতী মনীষীদের মধ্যে অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন অন্যতম। ১৫ জুলাই ১৮২০ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন, অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায়। তিনি বাঙালি লেখক, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অনুবাদক হিসেবেও ছিলেন দক্ষ।

সংবাদপত্রে লেখালেখি দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার অন্যতম সভ্য মনোনীত হন ১৮৩৯ সালে। ১৮৪২ সালে বিদ্যাদর্শন নামে একটি মাসিক পত্রিকা চালু করেন নিজস্ব উদ্যোগে। এই পত্রিকা তিনি বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারেননি। ১৮৪৩ সালে তিনি ব্রাহ্মসমাজ ও তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপত্র তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদকের পদে মনোনীত হন। এখানে তার প্রবন্ধ প্রকাশিত হতো। জমিদারি প্রথা, নীলচাষ ও তৎকালীন সমস্যা সম্পর্কে এই পত্রিকায় তিনি মতামত প্রকাশ করতেন। এই প্রবন্ধগুলিই পরে বই হিসেবে বের করতেন।

বিজ্ঞান আলোচনার ব্যাপারে তার আগ্রহ ছিল। তাকে ভারতে বিজ্ঞান আলোচনার পথিকৃৎ বিবেচনা করা হয়।

বাংলা, সংস্কৃত, ফারসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তিনি দক্ষ ছিলেন। বাবার মৃত্যুতে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাকে। বাড়িতে পড়াশোনা করে তিনি গণিত, ভূগোল, পদার্থবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা প্রভৃতি সম্পর্কে বেশ ভালো জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।

অক্ষয়কুমারের অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার অনুপ্রেরণাতেই মূলত তিনি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন। এ ধর্মে দীক্ষিত হিন্দু হলেও তারমধ্যে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান ও শিল্পকলার প্রাধান্য মেনে নেওয়ার মানসিকতা ছিল। তিনি হিন্দুদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ বেদ-এ বর্ণিত আত্মা এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে বহু ব্রাহ্ম ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

ফরাসি দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পরে একাত্মবাদে বিশ্বাসী হয়ে পড়েন। বারবার তিনি নিজের মতামত ও অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান পালনেও অনাগ্রহী ছিলেন তিনি। ঊনিশ শতকে বাঙালি পণ্ডিত সমাজের অনিশ্চয়তা তার জীবন যাপন দেখলে কিছুটা বোঝা যায়। তবু, বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে, উত্তরণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে গেছেন নবজাগরণের মাধ্যমে। তখনকার দিনে ইংরেজি ভাবধারাপুষ্ট বাঙালি যুবকদের ইয়াং বেঙ্গল বলা হতো। তিনি এ গোষ্ঠীভুক্ত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর