স্ট্যালিন ও হিটলার, নন্দিত ও নিন্দিত দুই মুখ

, ফিচার

জাভেদ পীরজাদা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-31 09:42:03

স্ট্যালিন মার খেয়েও ঘাসে দাঁতের দাগ লাগাননি

১৮৯৮ সাল ১০ জানুয়ারি। স্ট্যালিনের বয়স ২০। সেদিন জার শাসকরা জর্জিয়ার ২০ রেলশ্রমিককে মাঠে সারিবদ্ধ করে চাবুক মারছিল যতক্ষণ তারা লুটিয়ে মাটিতে পড়ছিল না। এ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্ট্যালিন। ঊনিশজন লুটিয়ে পড়ার পর স্ট্যালিনের পালা। শেষজন। তাকে মারতে গেলে তিনি একটু সময় নিয়ে একটা কচি ঘাস দু দাঁতের মধ্যে আলতোভাবে চেপে ধরে মারতে বললেন। দুজন চাবুক দিয়ে মারতে মারতে একসময় তারাই মাঠে লুটিয়ে পড়ল। স্ট্যালিন দাঁড়িয়ে। ক্যাপ্টেন ইভানভকে কাছে ডেকে দু দাঁতের ভেতরে ধরে রাখা কচি ঘাস বের করে বললেন, “তোমরা এত মারলে কিন্তু দেখো আমি এই কচি ঘাসের ওপর দাঁতের দাগ বসাইনি। আমাকে মারতে গিয়ে তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে। আমি হইনি। আর মনে রেখো তোমাদের এ শাসন-শোষণ ভেঙে দেওয়ার নায়ক হব একদিন। নাম আমার জোসেফ স্ট্যালিন।”

গ্রিসীয় সাংবাদিক কাজান জাকিস ‘রিপোর্ট টু গ্রেকো’-তে এ তথ্য দিয়েছেন। জন্ম ১৮৭৮ সালে জর্জিয়ায়। বাবা শ্রমিক ছিলেন। প্রতি রাতে শৈশবে দেখতেন বাবা মদ খেয়ে এসে মাকে মারতেন। কোনোদিন চুলো জ্বলত। কোনোদিন না। কিন্তু কৈশোর থেকেই তিনি প্রতিদিন আট কিলোমিটার দৌড়াতেন। ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে জারতন্ত্রের পতনের মধ্য দিয়ে বলশেভিক বিপ্লব হয়। প্রথম প্রেসিডেন্ট হন লেনিন। লেনিনের পরের মেয়াদেই স্ট্যালিন হন এ মহারাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তিনি যখন প্রেসিডেন্ট তখন ক্যাপ্টেন ইভানভকে খুঁজে বের করেন পেত্রাগার্দের একটা বস্তিতে। ইভানভের কেউ নেই। স্ত্রী-পুত্র-কন্যাহীন। বললেন, “তোমার কেউ নেই। আজ থেকে আমি তোমার সন্তান। তোমাকে দেখভাল করব। কারণ আমাকে মারার দিন আমার কথা শুনে তোমার চোখে জল দেখেছিলাম।” এই স্ট্যালিনই আবার বন্দী শিবিরে শ্রেণীশক্রুদের ওপর নির্যাতন চালাতেন। যারা কমিউনিজমের বিরোধী ছিল।

আরো পড়ুন ➥ প্রেম করে বিশ্বখ্যাত খুনের দুই আসামি

মারা যান ১৯৫৩ সালের ৫ মার্চ। মারা যাওয়ার বছরখানের আগে মস্কোতে একটা ঘরোয়া পার্টিতে কৈশোরের পছন্দের তরুণী তিতিয়ানার দেখা পেলে বলেছিলেন, “বিপ্লবী জীবন বেছে নেওয়ায় তোমাকে ভালোবাসবার অবসর পাইনি। কিন্তু তারুণ্যে পাওয়া তোমার প্রেমের প্রস্তাব এখনো আমার হৃদয়ে পতাকার মতো দোলে। মাফ করে দিও।”

প্রবেশ করতে না দেওয়া সেই মিউজিয়াম পরে কিনেছিলেন হিটলার

এডলফ হিটলার অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় ১৯০৭ সালে পেইন্টিং নিয়ে পড়াশোনা করেন। বিভিন্ন মানুষের পোর্ট্রেট আঁকতেন । ১৯০৯ সালে ভিয়েনার লেনিং স্ট্রিটের ফুটপাতে বসে সুসিয়ান নামের এক তরুণীর পোর্ট্রেট আঁকেন। পোর্ট্রেট সুন্দর হওয়ায় সুসিয়ান তাকে জানান, লুবজিগ শহরে একটি মিউজিয়াম আছে। পেইন্টিং আছে অনেক। ১৯১৪ সালে তিনি ওই মিউজিয়াম দেখতে যান। কিন্তু গরীব বলে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মিউজিয়ামটি ছিল অভিজাতদের জন্য। হিটলারের জন্ম ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল অস্ট্রিয়ার এক নিম্নবিত্ত পরিবারে। পরে তিনি যখন জার্মানির নাৎসি পার্টির প্রধান হন তখন অস্ট্রিয়ার লুবজিগ শহরের সেই বিখ্যাত মিউজিয়াম কিনে ফেলেন।

‘হিটলারস টেবিল টক’ বইতে তিনি বলেন, “গরীবের জন্য শিল্প নয়। এই আভিজাত্যবোধে আমি আঘাত করেছি। শিল্প সবার।” পরে তিনি মিউজিয়াম উন্মুক্ত করে দেন সবার জন্য। মিউজিয়ামের নাম ‘ল্যুডিং’।

হিটলার ভয় পেতেন এক নারী গোয়েন্দাকে। তার নাম ন্যান্সি ওয়েক

১৯৪২ সালের পর গেস্টাপো বাহিনীর মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে ছিলেন ন্যান্সি ওয়েক। তাকে হত্যা করার জন্য উঠেপড়ে লাগে এলিট ফোর্স। এমনকি তার মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৫০ লাখ ফ্রাঙ্ক। তার হদিস পেয়ে তার স্বামীকে খুন করে গেস্টাপো। জার্মানরা তাকে ‘হোয়াইট মাউস’ বলে ডাকত। হিটলারও টেনশনে থাকতেন এই নারী গোয়েন্দাকে নিয়ে। এই সেই ন্যান্সি ওয়েক যিনি ছিলেন বিশ্বখ্যাত গুপ্তচর। ব্রিটেনের পক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে কাজ করেছেন। ন্যান্সি ওয়েকের জন্ম ১৯১২ সালে।

দুর্ধর্ষ নারী গোয়েন্দা ন্যান্সি ওয়েক, প্রেমে পড়েন হিটলারের


নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে। তিনি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সাংবাদিক হিসেবে। কিন্তু ফরাসি শিল্পপতি জন ফোরবার্ডকে বিয়ের পর সাংবাদিকতা ছেড়ে দেন। ১৯৩৩ সালে ভিয়েনায় হিটলারের সাক্ষাৎকার নেন ন্যান্সি। হিটলারের কাছে জানতে চান, “শিশুর হাসি কেমন লাগে?” জবাবে হিটলার বলেন, “সব শিশুর হাসি ভালো লাগে না। যারা অনাদরে বেড়ে ওঠা শিশু তাদের ভালো লাগে। অন্যদের না।” ন্যান্সি এই একটি কথায় বুঝতে পারেন তার মধ্যে শ্রেণীবিদ্বেষ আছে এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী বলে ফ্যাসিস্ট হিসেবে ভয়ঙ্কর। ন্যান্সি এভাবে মানুষের মন বুঝতেন। কিন্তু সেটি হিটলারকে জানাননি। তিনি হিটলারকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন। এটা গোয়েন্দা হিসেবে নাৎসি বাহিনীর কাছে সহজে পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। সেই সুযোগ বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগান তিনি।

আরো পড়ুন ➥ বিশ্বসেরা নর্তকী ও ভয়ঙ্কর নারী খুনির গল্প

বিয়ের পর যোগ দেন ফ্রান্স রেজিস্ট্যান্সের গেরিলা বাহিনী মাকিসে। গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরে জার্মানদের হাতে ধরা পড়েন। অবাক ব্যাপার, বন্দীশিবির থেকে পালিয়ে লন্ডনে যান ন্যান্সি। যোগ দেন ব্রিটেনের স্পেশাল অপারেশনস এক্সিকিউটিভ (এসওই)-তে। আবারও গোয়েন্দার কাজে মন দেন এই ভয়ঙ্কর নারী। পরে ব্রিটিশ বিমান মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি নেন ন্যান্সি। ২০১১ সালের ৭ আগস্ট ৯৮ বছর বয়সে মারা যান এই দুঃসাহসী নারী গোয়েন্দা। তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই, ‘আই এ্যাম নট গুড’-এ জানান, তিনি হিটলারের বিরুদ্ধে যদিও কাজ করেছিলেন কিন্তু তার প্রেমে একতরফা পড়েছিলেন। তিনি বন্দীশিবির থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে একই সঙ্গে দুই প্রহরীর সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করেছিলেন। আর সেজন্য তার স্বামীকে মেরে ফেলার প্রসঙ্গে বলেছেন, “সে ভালোবাসত নিরুপদ্রব গোছানো জীবন। আর আমার পছন্দ ছিল ক্ষণে ক্ষণে এডভেঞ্চার। ফলে আমার এডভেঞ্চারের কারণে তাকে মরতে হলো।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর