গ্রহরাজ শনির মত সুন্দর গ্রহ দ্বিতীয়টা নেই। শনির রঙ নীলাভ। অন্যান্য গ্রহ আকারে গোল হলেও শনি কিন্তু তা নয়। গোলাকার শনিকে ঘিরে রয়েছে এক উজ্জ্বল বলয়। এই বলয়ের জন্যই শনিকে এত সুন্দর দেখায়। শনিই কিন্তু মোটেও অশুভ গ্রহ নয়। তবে জন্মছকে যখন শনির সাড়ে সাতি দশা অবস্থান করে তখনই জাতকের জীবনে শুরু হয় কষ্টভোগ। কিন্তু এরকম নয় শনির সাড়ে সাতি দশা চলার সময় পুরো সময়তেই খারাপ ফল দেবে। শনি গ্রহকে নিয়ে জাতকদের মনে ভয়ভীতি থাকলেও রাহু, কেতু অথবা জাতকের শুভ বা অশুভ নির্ভর করে ভুমিষ্ঠ হওয়ার সময় জন্মকালীন ছকে কু-গ্রহের অবস্থানের উপর।
গ্রহ চলমান এবং পরিবর্তনশীল। তাই প্রতিটি গ্রহের জন্মছকে সময়ে অবস্থানের শুভ বা অশুভ নির্ধারণ করা হয়। জন্ম কুন্ডলীতে গ্রহরাজ শনি যদি একক ভাবে শুভ ঘরে অবস্থান করে সেই সব ক্ষেত্রে শনিই কিন্তু হয়ে থাকে জাতকের রক্ষাকর্তা। প্রাপ্তি যোগে জাতক হয়ে উঠতে পারে ধনী থেকে অতিধনী বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। আবার চক্রে শনির বক্রদৃষ্টি পড়লে জাতক হয়ে পড়ে অসহায়। অর্থাৎ শনি যেমন রাজা করে দিতে পারে আবার মুহূর্তে ফকির করে দিতে পারে।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শনির সাড়ে সাতি দশা মানুষের জীবনকে তছনছ করে দিতে পারে। শনি যখন জন্মকালীন চন্দ্ররাশির দ্বাদশ, প্রথম ও দ্বিতীয় ঘর অতিক্রম করে এ সময়কালকে শনির সাড়ে সাতি বলা হয়। রাশিচক্রে শনি একেক রাশি অতিক্রম করতে সময় লাগায় আড়াই বছর। তিনটি রাশি অতিক্রম করতে সময় লাগে মোট সাড়ে সাত বছর। একেই বলে হয় শনির সাড়ে সাতি।
শনির সাড়ে সাতি দশা শারীরিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটায়। গুরুজনদের স্বাস্থ্য সঙ্কট সহ নানা রকম সমস্যা এনে দেয়। এই সাড়ে সাতি দশা জাতকের জন্ম থেকে মৃত্যুর মধ্যবর্তী জীবনে, জন্মছকে তিনবার পরিক্রম করে। বাল্যকালে, যৌবনকালে ও বৃদ্ধ বা শেষ বয়সে। প্রথম সাড়ে সাতি শিক্ষায় সঙ্কট এবং পিতামাতাকে কষ্ট দেয়। দ্বিতীয় সাড়ে সাতি কর্মক্ষেত্র, ব্যবসা ও অর্থ সংকট এনে দেয়, পরিবারে শান্তি বিঘ্নিত করে। প্রেম, ভালবাসা, বিবাহ ও দাম্পত্য জীবনকেও প্রভাবিত করে। তৃতীয় অর্থাৎ শেষ সাড়ে সাতি শরীর-স্বাস্থ্য, প্রিয়জন বা গুরুজনদের মৃত্যু পর্যন্ত এনে দেয়। তবে এবিষয়ে একটু সজাগ থাকলে সাড়ে সাতি প্রভাব কিছুটা জাতকও বুঝতে পারে।
যেমন রোগ হলে রোগী আগে টের পায়। পরে তিনি ডাক্তরের কাছে যান। একজন ডাক্তার যেরকম রোগ নিরাময় করতে পারেন সেরকম জ্যোতিষীই পারে সমস্যার জাল থেকে মুক্ত করতে। তবে পরিস্থিতি চরম না হলে মানুষ ডাক্তার বা জ্যোতিষির কাছে আসে না। আবার অনেক সময় আসার মত পরিস্থিতিও হয়ে ওঠে না।