ফ্ল্যাট ব্যবসায় সফল দুবাই প্রবাসী বাঙালিরা

, প্রবাসী

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 15:56:07

আল কারামা (দুবাই) থেকে: ময়মনসিংহের মো. সাইফুল ইসলাম ২০০৫ সালে একজন শ্রমিক হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) পারি জমান। কাজ করতেন একটি লন্ড্রি দোকানে। স্বল্প আয়ে চলত বাবা-মাসহ তার ছোট্ট পরিবারের। সংসারের আর্থিক অনটনের কারণে অল্প বয়সেই বাবার সংসারে হাল ধরেন সাইফুল।

লন্ড্রির দোকানের সামান্য শ্রমিক সাইফুল এখন দুবাইয়ের আল কারামে কয়েকটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটের মালিক। আর যে লন্ড্রি দোকানের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছিলেন তার মালিকও এখন তিনি। সাইফুল এখন একজন সফল ব্যক্তি।

ফ্ল্যাট ও লন্ড্রি ব্যবসার লাইসেন্স নিয়ে দিব্বি চলছে তার। সাইফুল ছোট ভাইকেও নিয়ে এসেছেন। নিজের সফলতার গল্প দেখাতে জন্মদাতা বাবাকে মাঝে মাঝে ‍ঘুরতে নিয়ে আসেন সাইফুল। রোববার (২২ ডিসেম্বর) আল কারামাতে তার ‍মুখেই শোনা যায় সফলতার গল্প।

দুবাইয়ের আল কারামের ফ্ল্যাট বাসা

সাইফুলের ফ্ল্যাট ব্যবসা শুরু ২০০৮ সাল থেকে। প্রথমে যে ‍রুমে ভাড়া থাকতেন সেখানে একজনকে পার্টনার রেখে ভাড়া ভাগাভাগি করে দিতেন। এরপর ওই রুমে পার্টিশন করে আরেকজনকে ভাড়া দেওয়া হয়। সেই থেকে তার শুরু। এখন দুবাইয়ের আল কারামাতে তার ২৪ টি ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাট এক বছরের জন্য কন্ট্রাক্ট নেন সাইফুল।

এরপর সেই ফ্ল্যাটের একটি রুমকে তিন থেকে চারটি রুম করেন। শুনে হয়তো বিশ্বাস হবে না এক রুমকে কী করে ৩ বা ৪ রুম করা যায়। বাস্তবে সেটিই করেছেন তিনি। রুমের ভেতর বোর্ড দিয়ে পার্টিশন করে ৩ ফুট চওড়া একটি খাট ও ১ টি ওয়্যারড্রপ দিয়ে খালাস। আর রুমে ঢুকার যে দরজা তার আয়তন মেপে দেখা গেছে মাত্র দেড় ফুট চওড়া। অর্থাৎ একজন স্বাস্থ্যবান মানুষ সোজা হয়ে ওই দরজা দিয়ে রুমে ঢুকতে পারবেন না।

উপরের সারিতে (বা থেকে) প্রবাসী ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী মো. রমজান, ফারুক হোসেন নিচের সারিতে হাবিবুর রহমান, জামাল মাহমুদ এবং মো. সাইফুল ইসলাম

প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে খাট কিভাবে ঢুকল? এখানে সবকিছু রেডিমেট। খাট রুমে সেট করেই পার্টিশন করা হয়। দেখা গেছে সাইফুল একটি রুম এক বছরের জন্য ১০ হাজার বা ১২ হাজার দিরহাম দিয়ে ভাড়া নিয়েছেন। সেই এক রুম চারটা বা তিনটা রুম করে মাসে ভাড়া তুলছেন ১ হাজার, ২ হাজার বা ২৫০০ দিরহাম। অর্থাৎ তিন রুম হলেও সর্বনিম্ন ৩ হাজার দিরহাম মাসে। অর্থাৎ বছরে ৩৬ হাজার দিরহাম। এটা শুধু একটি রুমের ভাড়া।

জায়গা বুঝে ভাড়ার হার নির্ধারিত হয়। দুবাই শহরের বুর্জ আল খলিফার একেবারেই কাছে আল আরাহা ভবনের ২৫, ২৪ ও ১৬ তলায় একটি করে ফ্ল্যাট কন্ট্রাকে নিয়ে সেখানে কোনো রুমে ৪টি, কোনটির ৫টি করে রুম করেছেন। সেখানে প্রতি রুমের ভাড়া ২৫০০-৩০০০ দিরহাম।

সাইফুল ইসলামের কথাতেই তার মাসিক আয় এক থেকে দেড় লাখ দিরহাম। সফল বলেই তিনি এখন একটির পর একটি ফ্ল্যাট বাড়িয়ে চলছেন। দুবাই শহরে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শ্রমিকরা মূলত রুমগুলো ভাড়া নেন। তার ফ্ল্যাটে আফ্রিকান, মরক্কো, আফগানিস্তান এবং রাশিয়ার বাসিন্দারাও ভাড়া থাকেন। বিশেষ করে, দুবাইয়ে যারা চাকরি বা কোন সুপার শপে কাজ করেন তারাই থাকেন এসব রুমে।

কর্মচারী থেকে দোকান মালিক সাইফুল

আল কারামাতে শুধু সাইফুল না। এরকম প্রায় ৩ হাজার প্রবাসী বাঙালি রয়েছেন যাদের প্রত্যেকে ফ্ল্যাট ব্যবসা করেন। রোববার রাতে অন্তত ৭ থকে ৮ জনকে পাওয়া যায় যারা সবাই চাকরি ছেড়ে এখন সফল ব্যবসায়ী। এই দলে আছেন চট্টগ্রামের জামাল মাহমুদ। আছেন হাবিবুর রহমান, ফারুক হোসেন, মো. রমজান ও শাহাদত হোসেন। এরা সকলেই বয়সে তরুণ।

লেবার হিসেবে আসলেও এখন তারা সফল ব্যবসায়ী। এদের কাজ ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া আর সেই ফ্ল্যাটকে কেটে কয়েক ভাগ করে ভাড়া দেওয়া। রুম সাজাতে কিছু খরচ হয়। যারা তরুণ এবং শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে আসছিলেন তারাই এখন দেশ থেকে শ্রমিক আনার জন্য উদগ্রিব। তাদের এই ব্যবসা দেখতেই প্রচুর লোক দরকার।

ফ্ল্যাটের ভাড়া তোলা, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা, ইলেকট্রিক কাজ, রুম ডেকোরেটরের কাজসহ বিভিন্ন কাজে তাদের এখন লোক দরকার। এদিকে ২০১২ সালের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা বন্ধ হওয়ার পর তাদের ব্যবসায় একটু স্থবিরতা আসছে।

এ বিষয়ে মো. রমজান বলেন, ব্যবসা হবে কিভাবে? আমার এখানে লোক দরকার। আমি তো আনতে পারছি না। এই দেশে ঢুকতে সমস্যা না থাকলেও বাংলাদেশ বিমানবন্দর থেকে ঢুকতে দিচ্ছে না। আমার ব্যবসা চালাতে নেপাল, ভুটান বা অন্য দেশের শ্রমিক নিতে হচ্ছে। তাদের বেতন বেশি দিতে হয়। আবার ওরা অনেক সময় থাকতে চান না। তাছাড়া বাঙালি শ্রমিক যতটুক কাজ করে অন্যরা ততটুক করে না।

তার দাবি ভিজিট ভিসা যদি সমস্যাই থাকত তাহলে এদেশের সরকার ভিসা দিত না। আর এই দেশে ঢুকতেও দিত না। আসলে ভিজিট ভিসা বন্ধ না। আমাদের দেশের বিমানবন্দরে কিছু অসাধু লোক টাকা খাওয়ার জন্য এই হয়রানি করে। জনপ্রতি ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ খরচ করলে ঠিকই ঢুকতে দেয়। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদের ভিসা জটটা যেন খুলে দেন। আমরা যাতে এই দেশে বিনিয়োগ করতে পারি।

আরও পড়ুন: সুখ-দুঃখের প্রবাস জীবন

মনোমুগ্ধকর শারজাহ সমুদ্র সৈকত

'দেশে গেলি ফিঙ্গার মাইরে দিবে'

এ সম্পর্কিত আরও খবর