প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত পুরো স্পেন। কোভিড-১৯ মহামারিতে স্পেন বর্তমানে আক্রান্তের দিক থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেশ। দেশটি গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এ মহামারির বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে।
সংকটের শুরুতে করোনা মোকাবিলায় গণস্বাস্থ্য বিভাগ বেশামাল অবস্থায় পড়লেও এখন কিছুটা সামলে উঠেছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এ সংকটের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অর্থনৈতিক সংকট।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনা মহামারির সাথে স্পেনের অর্থনীতিও এখন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) আছে। স্পেনের মধ্যেই করোনা মহামারি প্রতিরোধে দেশটি জিডিপির শতকরা ১০ শতাংশ খরচ করে ফেলেছে। যা ইউরোর অংকে প্রায় এক লাখ ২৮ হাজার ২৮৮ মিলিয়ন। মাদ্রিদের পরে সবচে বেশি আক্রান্ত প্রদেশ কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা করোনা ঠেকাতে ২০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে বলে জানিয়েছেন মেয়র আদা কোলাও।
স্পেনের কনফেডারেশন অব বিজনেস অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট আন্তনিয়ো গারামানদি জানিয়েছেন, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে জিডিপি নয় শতাংশের নিচে নেমে আসবে।
এ অবস্থায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা থাকা-খাওয়ার ব্যয় নির্বাহ নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মাদ্রিদে দুই এবং বার্সেলোনায় এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ১২৫ জন বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
সম্প্রতি 'রেড জোন' ঘোষণা করায় অধিকাংশ বাংলাদেশি আয়-রোজগার বঞ্চিত হয়ে সপরিবারে দুর্বিষহ দিন যাপন করছেন। এ অবস্থায় তাদের সহযোগিতায় মানবাধিকার সংগঠন ভাল্লিয়েন্তে বাংলা ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশি সামাজিক সংগঠনগুলো এগিয়ে এসেছে। যারা কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে স্পেনে আছেন, তাদের সহযোগিতায় একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে সংগঠনগুলো। এ প্রকল্পের আওতায় যারা কর্মহীন বা খাদ্য সংকটে রয়েছেন, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তাছাড়া যে কোনো দুর্দশাগ্রস্থ প্রবাসী বাংলাদেশির জন্যও প্রকল্পটি কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় দুই হাজার অসহায় ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে চাল, ডাল, তেলসহ অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা। এ প্রকল্পটি ধারাবাহিকভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
স্পেনে বাংলাদেশ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম মজুমদার, বাংলাদেশ আসোসিয়েশন ইন স্পেনের সাবেক সভাপতি আল মামুন, বাংলাদেশ আসোসিয়েশন ইন স্পেনের বর্তমান সভাপতি কাজী এনায়েতুল করিম তারেক, সিনিয়র সহ সভাপতি আলামীন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সুন্দর, গ্রেটার ঢাকা আসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি এম এইচ সোহেল ভূঁইয়া, ভাল্লিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে এলাহী, ঢাকা জেলা আসোসিয়েশন ইন স্পেনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রহমান ও ব্যবসায়ী আব্দুল কায়ূম মাসুকের মধ্যে যে কারো সঙ্গে সহযোগিতা নেওয়ার বা দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। এরই মধ্যে দূতাবাস তিনশ’ অসহায় ব্যক্তির নাম ও সংগ্রহ করেছে। শিগগিরই দুস্থদের মধ্যে সহায়তা সরবরাহ করা হবে বলে জানান দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মুহাম্মদ মুহতাসিমুল ইসলাম।
এদিকে রাজধানী মাদ্রিদের পর দ্বিতীয় সর্বচ্চো বাংলাদেশির বসবাস পর্যটন নগরী বার্সেলোনা। এখানে করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশিদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশিরা। তাদের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের জন্য সেল্ফ আইসোলেশনের ও খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও তারা হাসপাতালে দায়িত্ব পালনরত চিকিৎসক ও নার্সদের জন্যও স্ব উদ্যোগে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করছেন। স্পেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ১২৫ জন বাংলাদেশির এক তৃতীয়াংশের বেশি থাকেন বার্সেলোনায়।
শহরের কেন্দ্রে ও সান্তাকলমায় অনেক বাংলাদেশির করোনা পজিটিভ হওয়ার পরও শারীরিক অবস্থা ভেদে বা সংক্রমণের প্রাথমিক অবস্থার কারণে চিকিৎসকরা হাসপাতালে ভর্তি না রেখে বাসায় আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। এসব বাংলাদেশির অনেকে অবৈধভাবে স্পেনে আছেন। আবার অনেকের পরিবার বাংলাদেশে থাকে। ফলে তাদের দেখাশোনা করার কেউ নেই। তাদের জন্যই স্বেচ্ছাসেবক দল এ সেল্ফ আইসোলেশনের ব্যবস্থা করেছে। দলটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ সহযোগিতার ঘোষণা দিচ্ছে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বার্সেলোনায় বা সান্তাকলমায় কোনো বাংলাদেশির সেল্ফ আইসোলেশন দরকার হলে +34 632 22 14 48, +34 654 93 04 31, +34 645 03 36 87 নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করলে সহযোগিতা করা হবে। এ কার্যক্রমকে সফল করতে আমাদের কিছু স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন। যারা প্রবাসীদের আপৎকালে এ সহযোগিতায় সংযুক্ত হয়ে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে চান, তারা যেন এসব নম্বরে যোগাযোগ করেন।