আর কয়েক ঘণ্টা পরেই অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনে মুখোমুখি হবেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বোঝা যাবে কে হচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর উত্তরসূরী। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনগণ সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করে না। নাগরিকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হোন ইলেকটোররা। আর ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের ভোটে চূড়ান্ত হন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট। অর্থ্যাৎ প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বে পেতে আরো দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে।
সাধারণ ভোটারদের দ্বারা যিনি নির্বাচিত হন, ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ তাকেই চূড়ান্তভাবে প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত করেন। তবে গত ২০০০ সালে এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়েছিল।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর জর্জ ডব্লিউ বুশের চেয়ে প্রায় দুই লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। আর এ পার্থক্য গড়ে দিয়েছে ওই ইলেক্টোরাল কলেজ। মাইন ও নেবরাস্কা রাজ্যে কিছুটা ব্যতিক্রম হয় এই পদ্ধতির।
চলুন জেনে নেই ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ কী?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুই ধরনের নির্বাচন পদ্ধতি চালু আছে। সরাসরি ভোট প্রদানের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন করাকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনপ্রক্রিয়া বলে। আর পরোক্ষ নির্বাচনপ্রক্রিয়া হলো- যেখানে ভোটাররা ভোট দিয়ে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনী সংস্থা গঠন করেন। এ নির্বাচন সংস্থা ইলেকটোরাল কলেজ নামে পরিচিত। ইলেকটোরাল কলেজ চূড়ান্তভাবে প্রতিনিধি বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করে। নির্বাচনের ফলাফল পুরোপুরি নির্ভর করে ‘ইলেকটর’ বা নির্বাচকের ভোটের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি এ পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটসংখ্যা ৫৩৮। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজের ভোট পেতে হয়। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, নিউইয়র্ক, ইলিনয়, পেনসিলভানিয়া- এই ছয় অঙ্গরাজ্যের হাতেই রয়েছে ১৯১টি ইলেকটোরাল কলেজ। ‘উইনার টেক ইট অল’ নীতির কারণে এই ছয় অঙ্গরাজ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ইলেকটোরাল ভোট যেভাবে নির্ধারিত হয়-
কোন অঙ্গরাজ্যে কত ইলেকটোরাল ভোট থাকবে, তা নির্ধারিত হয় সেখানে কতটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। প্রতিটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের জন্য একটি করে ভোট এবং দুজন সিনেটরের জন্য দুটি ভোট বরাদ্দ থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৩টি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোর মতোই সেখানে রয়েছে ২টি সিনেট আসন। ফলে অঙ্গরাজ্যটির মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৫টি।
ইলেকটোরাল কলেজে যারা থাকে-
সাধারণ নির্বাচনের আগে দুই দলের পক্ষ থেকে তাদের মনোনীত ইলেকটোরাল ভোটারের তালিকা জমা দেওয়া হয়, যাকে স্লেট বলে। সাধারণ নির্বাচনের সময় যখন সাধারণ ভোটারেরা প্রেসিডেন্টকে ভোট দেন, তখন তাঁরা মূলত ইলেকটোরাল ভোটারের এই স্লেট নির্বাচন করেন। আসন্ন নির্বাচনে ক্যালিফোর্নিয়ায় যদি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন, তবে রিপাবলিকান দলের পাঠানো ইলেকটোরাল ভোটার স্লেটটি নির্বাচিত হবে।
প্রেসিডেন্ট যেভাবে নির্বাচিত হবে-
জনগণের ভোটে নির্বাচিত ইলেকটোরাল কলেজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটটি দেন। সাধারণ নির্বাচনের পর এবার ১৪ ডিসেম্বর এই ইলেকটোরাল ভোটারেরা সভায় বসবেন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নিজেদের ভোটটি আলাদা ব্যালটের মাধ্যমে দেবেন। পরবর্তী ৬ জানুয়ারি এই ভোট গণনার জন্য কংগ্রেস চেম্বারে সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিদ্যমান ভাইস প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সে সভায় ভোট গণনার পরই জানা যাবে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল।
প্রসঙ্গত, গত পাঁচটি নির্বাচনের মধ্যে দুটোতেই কম পপুলার ভোট পেয়েও ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ কম পপুলার ভোট পেয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।