টানটান উত্তেজনায় মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) দিনব্যাপী চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের বহুল আলোচিত ও উত্তেজক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২০। নির্বাচনে এতো আলোচনা ও উত্তাপ অতীতের সকল নির্বাচনের রেকর্ড ভেঙেছে। ভোট নয়, যেন ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে চলছে যুদ্ধ, যা নির্বাচনের পরেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প সব নির্বাচনী সমীক্ষাকেও ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের এই মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভোট-পরবর্তী দাঙ্গার সম্ভাবনাও নাকচ করছেন না অনেকে। বিশেষত, রেকর্ড পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির পরিসংখ্যানে সন্দেহটি পাকা ভীতিতে রূপ নিয়েছে সারা যুক্তরাষ্ট্রে।
একদার ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন জনতার রায়ই 'সত্য'। তিনি আমেরিকার গণতন্ত্রকে বাঁচানোর ডাক দিয়েছেন। ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এক অর্থে 'ভুয়া' ও 'সত্যে'র লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়েছে।
ক্ষমতায় থাকা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন এতোটাই এগিয়েছেন যে, ২০০৮ সালের পর আর কোনো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে এতটা শক্তিশালী দেখায়নি। সমীক্ষাকে পাত্তা না দিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন, তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না। ভোটের ফল তার বিপক্ষে গেলে আইনি রাস্তাতেও হাঁটার জন্য আগেভাগে আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। দিয়েছেন ক্ষমতা না ছাড়ার হুমকিও। এমনকি, ট্রাম্প ‘অঘটন’-এর বিষয় মাথায় রেখে হেরে গেলে পরবর্তী পদক্ষেপের ছকও করে রেখেছেন ট্রাম্প।
দুই প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের 'ব্যাটলগ্রাউন্ড' রাজ্যগুলোতে আর ইলেক্টোরাল ভোটে। সর্বশেষে সম্পন্ন রয়টার্সের করা সমীক্ষায় বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা ৫১ শতাংশ, ট্রাম্পের ৪২ শতাংশ।‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর সমীক্ষাতেও উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া, ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনার মতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে এগিয়ে থাকছেন বাইডেন। অন্যান্য সমীক্ষাতেও পাল্লা ভারী বাইডেনেরই।
যদিও পপুলার ভোট তথা জাতীয় নির্বাচনের ভিত্তিতে করা এই সব সমীক্ষা সব সময় শেষ কথা বলে না। এই সমস্ত সমীক্ষায় এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে হেরে গিয়েছেন, এমন নজির অনেক রয়েছে আমেরিকায়। কিন্তু এবার বাইডেন এতটাই এগিয়ে রয়েছেন যে অশনি সঙ্কেত দেখছে রিপাবলিকান শিবির।
২০১৬ সালের হিসাব থেকে দেখা গিয়েছিল, ডেমোক্রাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৩০৬, হিলারির ঝুলিতে পড়েছিল ২৩২ ভোট। অথচ মোট ভোটের ৪৮.২ শতাংশ পেয়েছিলেন হিলারি, ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪৬.১ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত এ বারও পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে ঘোরাতে পারেন কিনা ট্রাম্প, তার উত্তর জানা যাবে আমেরিকার সময় ৩ নভেম্বর রাতে।
আমেরিকায় ভোটদানের দু’টি পদ্ধতি রয়েছে— ইমেল ভোটিং এবং সরাসরি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া। করোনা সংক্রমণের জন্য এ বছর এই ই-মেল ( আর্লি ভোটিং) ভোটিং বেশি হয়েছে। এই ইমেল-এ দেওয়া ভোটের গণনা হবে পরে। আগে থেকেই এই ভোটিংয়ে কারচুপির আশঙ্কা করে এবং গণনার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ‘এটা ভয়ঙ্কর পদ্ধতি যে ভোটের পর ব্যালট সংগ্রহ করা হবে। আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি।’ অর্থাৎ ট্রাম্প যে সহজে হার মেনে নেবেন না, তা তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট।
আমেরিকায় গণনা হয় ভোটের দিনই। চূড়ান্ত ফলাফল জানতে মধ্যরাত বা পরের দিন পর্যন্ত হয়ে যায়। এই পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, ‘কে জিতল, আমেরিকানরা সাধারণত ভোটের দিন রাতেই সেটা জেনে যান। কারণ সংবাদ মাধ্যমগুলি গণনার আংশিক ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ফল ঘোষণা করতে থাকে। কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ফলাফল নয়।’
ভোটপর্বে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু ঘিরে আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল জাতি হিংসা। ভোটের ফল ঘোষণার পরে বা আগে থেকেই ফের তেমন সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তার কিছুটা ইঙ্গিত মিলেছে আমেরিকানদের আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সংখ্যাবৃদ্ধি থেকে। আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে হলে পুলিশ সেই ব্যক্তির যাবতীয় পূর্ব ইতিহাস (ব্যাকগ্রাউন্ড চেক) খতিয়ে দেখে তার পর ছাড়পত্র দেয়। এফবিআই-এর হিসেবে এ বছরের মার্চ এবং সেপ্টেম্বরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এই ব্যাকগ্রাউন্ট চেক। ভোট পরবর্তী অস্থিরতার ইঙ্গিত দিয়েছেন ফেসবুক কর্তা জাকারবার্গও।