অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমেরিকায় শুরু হচ্ছে বাইডেন যুগ। ফলে বুধবার (বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার) প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার দিন থেকেই কাজ শুরু করবেন তিনি। এবং সেটা বিভিন্ন সঙ্কুলতা ও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই পাড়ি দিতে হবে আমেরিকার এই নতুন নেতাকে।
দেশের ভেতরে তার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ করোনা মোকাবেলা, যা আমেরিকাকে চরমভাবে নাজেহাল করেছে। করোনা-সৃষ্ট বেকারত্ব, মন্দা ও আর্থিক বিপর্যয় রুখতেও তাকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
বাইডেন প্রশাসনকে আমেরিকার ভেতরকার রাজনৈতিক সঙ্কট, দূরত্ব ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকেও শান্তিপূর্ণ উত্তরণের পথে নিয়ে হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য নীতিতে পরিচালিত আমেরিকার রাষ্ট্রব্যবস্থায় আইন পরিষদের (সিনেট ও রিপ্রেজেন্টেটিভ) সঙ্গেও তাকে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে হবে। বস্তুত পক্ষে, সবার সঙ্গে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ার কাজে মনোযোগী হতে হবে তাকে।
বিভিন্ন সময়ে বাইডেন বহুপক্ষীয় বিষয়ের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যিক জোট পুনঃস্থাপনে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। ফলে তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চুক্তির বিষয়ে ও সংগঠনের সঙ্গে ইতিবাচক ও বন্ধুত্বপূর্ণ নীতিতে চলবেন বলে বিশ্লেষকগণ মনে করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেসব সঙ্কট দেশে-বিদেশে সৃষ্টি করেছেন, সেগুলোও তাকে সামাল দিতে হবে।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বহুপক্ষীয় অনেক চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ এবং ইরানের পরমাণু চুক্তি ছিল সেসবের অন্যতম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্প যে পরারাষ্ট্রনীতি নিয়েছিলেন তা ছিল অনেকটা সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের মতো। এই দুই নেতার মধ্যে একটি বিষয় অভিন্ন ছিল। তা হলো, তারা মনে করতেন তাদের দেশ অন্য কারো বন্ধু হতে পারে না।
বাইডেন সম্ভবত ট্রাম্পের সে পথ পরিহার করবেন। জো বাইডেন এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম ইউরোপ সহ অনেক দেশের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করবেন বলে সবার ধারণা। বিশেষ করে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেলের সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় করবেন তিনি। বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মারকেলের সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কিন্তু ট্রাম্পের সময়ে এই মারকেলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছিল।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনকে প্রত্যাহার করে নেয়ার কারণে বরিস জনসনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন ট্রাম্প। বাইডেন হয়ত এতোটা প্রশংসা করবেন না ব্রিটিশ নেতার।
ইতিমধ্যে জো বাইডেন তার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাচ্ছেন ঝানু সব কূটনীতিককে। এক্ষেত্রে তিনি কালবিলম্ব করেননি। তিনি ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে সমঝোতাকারী হিসেবে একজনকে মনোনয়ন দিয়েছেন, যিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন করেন যারা, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জো বাইডেন। এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, ব্রাজিলের উগ্র ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসনারো, মিশরের ফৌজি প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। এদের সবার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
তবে বাইডেনের সকল পদক্ষেপ সুগম হবে, এমন মনে করার কারণ নেই। রিপাবলিকানদের সবাই এই ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্টকে সব সময় পূর্ণ সমর্থন দেবেন, এমনটি না-ও হতে পারে। তদুপরি, ট্রাম্পের গোপন সমর্থকরা তাকে কায়দা মতো পেলে বিপদে ফেলতে পিছপা হবে না। ফলে বাইডেনকে সামনের দিনগুলো পেরুতে হবে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই।