যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্রেট নেতা জো বাইডেন শপথ গ্রহণ করবেন ২০ জানুয়ারি। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় অনুযায়ী তা দুপুরের কিছু আগে আর বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ১০টার অব্যবহিত পর। শপথের মাধ্যমে নতুন নেতার অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে মার্কিন আইনসভা ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম ফ্রন্টে।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যেমনটি সব সময় হয়েছে মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, এবার তা হবে না। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়ে গেছেন হোয়াইট হাউসে নিঃসঙ্গ ও একা। হোয়াইট হাউসের সিনিয়র-জুনিয়র স্টাফরা প্রেসিডেন্টকে ছেড়ে চলে গেছেন। তাকে বিদায় জানানোর আন্তরিক ও সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশও অবশিষ্ট নেই।
যদিও এহেন ট্রাম্প এখনো নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন বলে দাবি করছেন এবং বিলম্বিত শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্টকে, তথাপি ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও ওয়াশিংটন ডিসির নিকটবর্তী ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডে স্বল্পসংখ্যক উগ্রবাদী সশস্ত্র ট্রাম্প সমর্থক বিক্ষোভ করেছে। সিটিজেন ডিফেন্স লিগের ব্যানারে জড়ো হলেও এই গ্রুপ কট্টর শ্বেতাঙ্গবাদী প্রাউড বয়, বগালো ও ব্ল্যাক প্যান্থারের সঙ্গে জড়িত। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে হামলার কলঙ্কিত অধ্যায়ের কথা ট্রাম্পের শেষ কর্মদিবসেও আবার মনে করিয়ে দেয় বিভিন্ন স্থানে তার পক্ষের বিক্ষোভগুলো।
এতো কিছুর পরেও নতুন নেতা বাইডেনের শপথ হবে যথা নিয়মে। যদিও করোনা এবং নিরাপত্তার কারণে অনুষ্ঠানে কাটছাঁট হয়েছে। কোভিড অতিমারি দুর্যোগের কারণে এমনিতেই বিপর্যস্ত গোটা দেশ। প্রায় ৪ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে আমেরিকায়। ফলে ঐতিহ্যবাহী অনেক আইটেম অভিষেক অনুষ্ঠানে থাকবেনা। তদুপরি, গত ৬ জানুয়ারি মার্কিন আইনসভা ক্যাপিটল হিলে সন্ত্রাসী হামলার পরবর্তী পরিস্থিতিতে আরো সংক্ষিপ্ত করে ফেলা হয়েছে যাবতীয় আয়োজন।
১০টির বদলে মার্কিন আইনপ্রণেতারা এবার অনুষ্ঠানের মাত্র ২টি করে টিকিট পাবেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শপথ অনুষ্ঠানে প্রায় ২০ লাখ লোক সমাগম হয়েছিল। কিন্তু এবার তা কয়েক হাজারের বেশি হবে না। প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজেও চান না অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ুক। তিনি নিজে সবাইকে ঘরে বসে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপভোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে অভিষেকের প্রটোকল অনুযায়ী দুপুরের কিছু আগে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জোসেফ আর, বাইডেনকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন ইউএস সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন জি, রবার্ট। বাইবেল ছুঁয়ে মাত্র ৩৫ শব্দের শপথ নেয়ার সময় প্রেসিডেন্টের পাশে থাকবেন ফার্স্টলেডি জিল বাইডেনসহ তার পরিবারের সদস্যরা। আমেরিকার বিখ্যাত ব্যান্ড রালফ লোরেনের গাঢ় নীল স্যুটের সঙ্গে হালকা নীল শার্ট পরে বাইডেন শপথ নেবেন। নতুন প্রেসিডেন্টের আনুগত্যের অঙ্গীকার পরিচলনা করবেন একজন অগ্নি নির্বাপক কর্মী এবং প্রার্থনা অনুষ্ঠান পরিচলনা করবেন বাইডেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু একজন ধর্ম যাজক।
এরপর নতুন প্রেসিডেন্ট তার ইনোগ্ররাল বক্তব্য রাখবেন এবং সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করবেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে সকল বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ।
অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে থাকবে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস ও এফবিআই। অনুষ্ঠানে দু’জন বিখ্যাত সেলিব্রেটি অংশ নেবেন। লেডি গাগা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করবেন। জেনিফার লোপেজও গাইবেন গান। তবে ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সেলিব্রিটির অংশগ্রহণ থাকবে। তারা দর্শক-শ্রোতাদের জন্য পারফরম করবেন। করোনায় নিহতদের স্মরণে উৎসর্গ করা এই অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে কবিতা আবৃত্তি, গান ও নৃত্য দিয়ে।
রাত সাড়ে ৮টায় প্রাইম টাইমে ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠান হবে। জাতীয় টেলিভিশনে প্রচারিত হবে এই অনুষ্ঠানমালা। এতে সেলিব্রেটিদের মধ্যে থাকবেন- জাস্টিন টিম্বারলেইক, ডেমি লাভাটো, এন্ট ক্লিমন্স, জন বন জবি, ফো ফাইটার, জন লেজেন্ট ও ব্রুস স্প্রিংস্টিন। এই অনুষ্ঠানের হোস্ট থাকবেন টম হ্যান্ক।
ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে সকল শিল্পী কলাকুশলী যার যার অবস্থান থেকে অংশ নেবেন।
নতুন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট শপথ নেয়ার পর হোয়াইট হাউসে গমনের পথে পেনসিলভেনিয়া এভিন্যুতে অনুষ্ঠিত প্যারেড এবার থাকছে না। এর পরিবর্তে নতুন প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে সামরিক বাহিনীর নেতৃবৃন্দ এস্কট দিয়ে নিয়ে যাবেন অনুষ্ঠান স্থল থেকে হোয়াইট হাউস পর্যন্ত। শপথ উপলক্ষ্যে লিংকন মেমোরিয়ালের চারপাশে করোনাভাইরাসে নিহত আমেরিকানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে করা হবে বিশেষ আলোকসজ্জা।