সময়োচিত পদক্ষেপ ও বৈশ্বিক নেতৃত্বের অভাবেই করোনা বিপর্যয়!

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-20 17:19:21

করোনাভাইরাস বিধ্বস্ত গোটা পৃথিবী। ভাইরাস মোকাবিলায় একদিকে চলছে টিকা প্রয়োগ, অন্যদিকে ভাইরাসটির নতুন নতুন মিউটেশন। করোনার নতুন ধরন মোকাবিলায় এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের নাজেহাল অবস্থা।

কোভিডের এমন থাবার মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে তাতে বলা হয়েছে- মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল। যদি ভাইরাসটি প্রতিরোধে বিশ্ব দ্রুত পদক্ষেপ নিত তাহলে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের প্রাণহানি ঘটত না।

করোনা প্রতিরোধে ‘বিশ্ব নেতৃত্বকে’ দায়ী করে প্রতিবেদনটির দায়িত্বে থাকা একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের দাবি, বিশ্ব নেতারা সময়মতো পদক্ষেপ নিয়ে যদি শেষ পর্যন্ত আনতে পারত তাহলে এটি পুনরায় সংক্রমণ ছড়াত না। 

এই প্যানেলের চেয়ারম্যান ছিলেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক এবং লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সারলিফ। করোনা মহামারী প্রতিরোধে ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ করে তারা জানান, ধারাবাহিক ভাবে নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল দুর্বল।

তাদের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মোকাবিলায় যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল সেগুলো ছিল অসঙ্গতিপূর্ণ এবং কিছুটা অর্থহীন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা জারির প্রক্রিয়াও ছিল ধীর গতির এবং সাধারণ ছিল। এছাড়া ‘বৈশ্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বও অনুপস্থিত ছিল’।

ক্লার্ক ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসকে তুলে ধরে বলেছেন, এ মাসে মহামারী এড়ানোর অনেক সুযোগ ছিল, যা কাজে লাগানো হয়নি। অনেক দেশ দেখি কি হয়!- এই অপেক্ষা করেছিল। কেউ কেউ তো হাসপাতালের আইসিউ বেড পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে মহামারীর বিপর্যয় এড়াতে বেশি দেরি হয়ে গেছে।

অন্যদিকে প্রতিবেদনে সারলিফ জানান, আজকে আমরা নিজেদের যেখানে দেখছি; তা আমরা প্রতিরোধ করতে পারতাম। এ প্রার্দুভাব সারস কোভি -২ একটি বিপর্যয়কারী মহামারী হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের প্রায় ৩.২৫ মিলিয়নেরও বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সারা বিশ্বের জীবন ও জীবিকা আজ হুমকির মুখে। সময়মত প্রস্তুতি না নেওয়া, পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়া এবং অতীত থেকে শিক্ষা নিতে দেরি করায় আজ বিশ্ব বিপর্যয়ের মুখে।

জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে নিতে বলেন, অতীতের স্বাস্থ্য সংকটের অনেক পর্যালোচনা ছিল, যার মধ্যে কিছু গুরত্বপূর্ণ সুপারিশও ছিল। এগুলো এখন জাতিসংঘের বেসমেন্টের ধুলায় এবং সরকারি তাকে পড়ে রয়েছে। আমাদের তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেশির ভাগ দেশ মহামারীর জন্য প্রস্তুত ছিল না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক সদস্য দেশগুলো প্ররোচণায় এই রিপোর্টটি অনুমোদন দেয়। কী ঘটেছে এবং মহামারী থেকে কী শিখতে পারে তার নিরপেক্ষ পর্যালোচনার জন্য গত বছরের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে ডেকেছিলেন সংস্থাটি। তার উপর ভিত্তি করে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

প্যানেলটি মহামারীর প্রস্তুতি তদারকি করার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্বের যেখানে অর্থ ও সরঞ্জামের চাহিদা রয়েছে সেখানে তা নিশ্চিত করতে হবে। তারা ডাব্লিউএইচও’র আরো কার্যকরী ভূমিকা চায়। ধনী দেশগুলোর নেতাদের কাছে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহের প্রতিশ্রুতিও চেয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনে যখন ভাইরাসটি শনাক্ত হয়, তখনই তারা সতর্ক করেছিল। ওই সময় সবার সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।

ক্লার্ক প্রতিবেদনে বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি প্রদানে বাধা দেওয়া হয়েছিল। সংস্থাটিকে সেভাবে সহায়তা করা হয়নি। ডাব্লিউএইচও’কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধা দেওয়া হয়। সংস্থাটিকে বাণিজ্য প্রসারের হুমকি হিসেবে ধরা হয়। সেই সঙ্গে অকারণে সীমানা বন্ধ করতে নিষেধ করে।

করোনা মোকাবিলায় প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে- ভাইরাসটির বর্তমানে সংক্রমণের যে উচ্চ হার এবং মিউটেশন; যা গভীর উদ্বেগজনক। করোনা প্রতিরোধে প্রতিটি দেশকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোকে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে হবে। নিজেদের প্রয়োজন মেটানো পাশাপাশিও কোভাক্সকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ১ বিলিয়ন ডোজ সরবরাহ করতে হবে। এই টিকা জাতিসংঘের সহায়তায় ৯২টি নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে দিতে হবে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ২ বিলিয়ন ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

সূত্র: গার্ডিয়ান

এ সম্পর্কিত আরও খবর