ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে অবস্থান নিয়েছেন তাতে ডেমোক্রেটদের তোপের মুখে পড়েছেন তিনি।
রোববার (১৬ মে) সিএনএন তাদের এক বিশ্লেষণে জানায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পরাজিত করে সামাজিক ও জাতিগত ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডেমোক্রেটিক দল ক্ষমতায় এসেছে। তাই এ সময়ে এসে ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলা এই দলটির জন্য বেশ অস্বস্তিকর। যুক্তরাষ্ট্র বর্ণবাদ ও বৈষম্যের ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে এবং ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকে গ্রহণ করেছে।
বামপন্থী উদারনৈতিক সদস্যরা মনে করেন, পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ন্যায়বিচারের একইরকম ধারণার প্রয়োগ করা। অনেকেই বর্তমানে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আচরণকে জাতিগত বিদ্বেষ হিসেবে মনে করছে। তাই তারা ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য কিছু করার দাবি জানান।
সোচ্চার উদারপন্থীরা ইসরায়েলকে উসকানি দেওয়ার জন্য ও মানবাধিকার উপেক্ষা করে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য হোয়াইট হাউসের সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনিদের যে পরিকল্পিতভাবে উচ্ছেদ করা হচ্ছে সে বিষয়ে বাইডেন বিরোধিতা না করায় নিজ দলের মধ্যেই তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
শনিবার (১৫ মে) বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টকে এই ইস্যুতে গভীরভাবে জড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় এপি, আল জাজিরাসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাইডেন।
তবে লিবারেলরা বলছেন, কেবল বিবৃতিই যথেষ্ট না, ইসরায়েলের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে সরাসরি আলোচনা করা উচিত।
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি যতদূর বিষয়গুলো দেখেছি এ পর্যন্ত সেখানে কোনও উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন শনিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজের সাথে কথা বলেছেন। অস্ট্রিন টুইটারে বলেছেন, আমি আবারও নিশ্চিত করেছি যে, ইসরায়েল আত্মরক্ষা করছে, তাদের সেই অধিকার আছে। হামাস ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করছে আমি এর নিন্দা জানাই।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলার একটি সাধারণ মন্ত্র হলো, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। গত বুধবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনও একই কথা বলেছেন। এরপরই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ বা আইনসভার নিম্নকক্ষে লিবারেলরা এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৮০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫২ জনই শিশু। অপর দিকে আহত হয়েছে এক হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়া এখন পর্যন্ত দুই শিশুসহ ইসরায়েলে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছেন প্রভাবশালী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রতিনিয়তই বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করছেন। গত শুক্রবারও নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক ওপেডে তিনি লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই নেতানিয়াহু সরকারের পক্ষে কথা বলা বন্ধ করা উচিত।