মহামারি করোনায় বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য হারে শিশুশ্রম বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী করোনা মহামারিতে বিশ্বে প্রতি ১০ শিশুর একটি মজুরিভিত্তিক কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত আইএলও ও ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত দুই দশক ধরেই বিশ্বে শিশুশ্রম বাড়তে থাকলেও মহামারিতে এ হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২০ সালে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১৬ কোটি অতিক্রম করেছে বলেও জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।
হাসিখেলায় জীবনের সবচেয়ে নির্মল বয়সটা পার করার কথা ছিল কর্মরত এসব শিশুদের। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা অকালেই তাদের বানিয়েছে কারিগর। পরিবারের আরও পাঁচটা মুখও অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে শিশুটির উপার্জনের দিকেই। সারা বিশ্বের কোটি কোটি শিশু শ্রমিকের জীবনের গল্পটা এমনই।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, গত এক দশক ধরে বিশ্বে বেড়েই চলেছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, করোনা মহামারি ও লকডাউনের প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট গত এক বছরে আরও কোটিখানেক শিশুকে ঠেলে দিয়েছে একই দুর্ভাগ্যের দিকে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, শিশুশ্রম বন্ধের লড়াইয়ে আমরা হারতে বসেছি। মহামারি আমাদের অনেক পেছনে ঠেলে দিয়েছে। বৈশ্বিক লকডাউন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, অচল অর্থনীতি ও জাতীয় বাজেট সংকোচনের দ্বিতীয় বছর চলছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক পরিবারকে বাধ্য হয়ে সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ করে কাজে পাঠানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
শিশু শ্রমিকদের অর্ধেকের বেশিরই বয়স পাঁচ থেকে ১১ বছরের মধ্যে। ২০১৬ সাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৬৫ লাখ থেকে বেড়ে সাত কোটি ৯০ লাখে পৌঁছেছে। কৃষিখাতে সবচেয়ে বেশি শিশু শ্রমিক নিয়োজিত থাকে বলে উল্লেখ করা হয়।
জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নিলে বিশ্বে দারিদ্রপীড়িত পরিবারের সংখ্যা বিপুল হারে বাড়ার আশঙ্কা জানিয়ে জাতিসংঘ বলছে, আগামী দুই বছরের মধ্যে জোর করে কাজে যাওয়া শিশুর সংখ্যা পাঁচ কোটি বাড়বে।