ভারতের পলাতক শিল্পপতি বিজয় মালিয়া ব্রিটেনে দেউলিয়া ঘোষিত

ইউরোপ, আন্তর্জাতিক

লুৎফে আলি মহব্বত, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 00:27:46

ভারতের বিপুল সম্পদ নিয়ে পলাতক শিল্পপতি বিজয় মালিয়াকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে ব্রিটেনের একটি আদালত। মালিয়ার বিরুদ্ধে দেউলিয়া অর্ডার ঘোষণা করার ফলে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের মালিকের বিশ্বজুড়ে যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার পেয়ে গেল স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। মালিয়ার বিপুল ঋণের বোঝা মেটাতে একাধিক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে এবার।

এদিন ব্রিটিশ উচ্চ আদালতের চ্যান্সেরি ডিভিশনের মুখ্য দেউলিয়া ও কোম্পানি এজলাসের বিচারক মাইকেল ব্রিগস ভার্চুয়াল শুনানিতে বিজয় মালিয়াকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন। ভারতীয় ব্যাংকগুলির তরফে আইন সংস্থা টিএলটি এলএলপি এবং আইনজীবী মার্সিয়া শেকের্ডমেইন আদালতে আবেদন করেন মালিয়াকে দেউলিয়া ঘোষণা করার জন্য।

৬৫ বছর বয়সী শিল্পপতি ব্রিটেনে জামিনে রয়েছেন এখন। ব্রিটিশ আদালতে তাঁর ভারতে প্রত্যর্পণ মামলা এখনও বিচারাধীন। শুনানিতে মালিয়ার আইনজীবী দেউলিয়া ঘোষণা নির্দেশ স্থগিত রাখার আবেদন করেন। কিন্তু সেই আবেদন ধোপে টেকেনি।

দেউলিয়া মামলায় এসবিআইয়ের নেতৃত্বে ১৩টি ভারতীয় ব্যাংকের কনসোর্টিয়াম মামলা করে। ব্যাংক অফ বরোদা, করপোরেশন ব্যাংক, ফেডেরাল ব্যাংক, আইডিবিআই ব্যাংক, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাংক, জম্মু-কাশ্মীর ব্যাংক, পাঞ্জাব-সিন্ধ ব্যাংক, পিএনবি, স্টেট ব্যাংক অফ মাইসোর, ইউকো ব্যাংক, ইউবিআইয়ের মতো ব্যাংকগুলি থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেননি মালিয়া।

বিজয় মালিয়া ভারতের এক অতি পরিচিত ধনকুবেরের নাম। নিজস্ব আইল্যান্ড, আলিশান বাংলো, ব্যক্তিগত বিমান, এয়ারবাস, গাড়ি, কী ছিল না তার! ভারতের একসময়ের জনপ্রিয় পানীয় কোম্পানির মালিক তিনি। ২০০৫ সালে ধুমধাম করে চালু করেন কিংফিশার এয়ারলাইনস। তা আবার ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পায়। শখের বশে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ফ্র্যাঞ্চাইজিও হন।

ভারতের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নয় হাজার কোটি রুপি ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান ভারতের এক সময়ের ধনকুবের বিজয় মালিয়া। ২০১৭ সালে তাঁকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। একই বছরের ডিসেম্বরে লন্ডনের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার বিচার শুরু হয়। ইতিমধ্যে ভারতের ‘প্রথম পলাতক আর্থিক অপরাধী’ এর খেতাবও পেয়ে গেছেন তিনি। অথচ এক সময় তিনি ‘কিং অফ গুড টাইমস’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। বিজয় মালিয়া খুবই বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্থ ছিলেন। তার ছিল নিজস্ব আইল্যান্ড, বিলাসবহুল বাংলো, ব্যক্তিগত বিমান, দামি গাড়ি।

বিজয় মালিয়া ভারতের কর্ণাটকে এক ধনাঢ্য পরিবারে ১৯৫৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান। বাবার মৃত্যুর পর বিজয় মালিয়া এই গ্রুপের ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যান পদে স্থলাভিষিক্ত হন। মালিয়ার প্রাথমিক জীবন কেটেছে কর্ণাটকের বান্তাল শহরে। মাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন লা মার্টিনিয়া স্কুলে এবং ব্যাচেলর অফ কমার্স ডিগ্রি অর্জন করেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে। পড়াশোনা চলাকালীন সময় থেকেই তিনি ব্যবসায়িক কাজকর্মে যুক্ত ছিলেন।

তিনি মূলত মদ তৈরির ব্যবসা করে ধনকুবেরে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ গ্রুপের ডিরেক্টর এবং ১০ বছর পর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৮৩ সালে তিনি বিয়ার ব্যারন ম্যাক ডুয়েলস চালু করেন। এই কোম্পানির মাধ্যমেই তিনি ক্রমাগত সফলতা লাভ করতে থাকেন। ২০০৫ সালে এসে বিজয় মালিয়া ভারতীয় অন্যতম পুরাতন মদ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘শ’ ওয়েলস কিনে নেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর