হরদীপ সিং হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিন ভারতীয় গ্রেফতার

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কানাডার নাগরিক এবং সেখানে বসবাসরত শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিন ভারতীয়কে গ্রেফতার করেছে কানাডা পুলিশ। 

শুক্রবার (০৩ মে) কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) এর একটি দল কানাডার অ্যালবার্টা প্রদেশের এডমন্টন শহর থেকে তাদের গ্রেফতার করে।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতারকৃতরা হল-করণপ্রীত সিং (২৮), কমলপ্রীত সিং (২২) এবং করণ ব্রার (২২)। তারা সবাই এডমন্টন শহরের বাসিন্দা। আদালতের নথিপত্র অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার তিন জনকে গ্রেফতারের পর আরসিএমপির সুপারিন্টেডেন্ট মনদীপ মুকার বলেন, ‘ভারতের সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।’

আরসিএমপির কমিশনার ডেভিড টেবৌল বলেছেন, ‘তদন্ত এখনই শেষে হচ্ছে না; কারণ আমাদের ধারণা, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও লোকজন যুক্ত। আমরা প্রত্যেককে গ্রেফতার করার লক্ষ্য নিয়েছি।’

এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে রাজধানী অটোয়ায় ভারতের প্রধান দূতাবাস কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স; কিন্তু কোনো মুখপাত্র ও কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৮ জুন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যানকুভার শহরের শহরতলী এলাকা সারেতে একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন হরদীপ সিং নিজ্জর।

এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে দেওয়া এক ভাষণে সরাসরি ভারতকে দায়ী করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা হরদীপ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন।

নিজ্জর হত্যার ঘটনা কানাডার সার্বভৌমত্বের জন্য যে তীব্র অবমাননাকর, নিজ বক্তব্যে তা উল্লেখও করেছিলেন তিনি।ভারত অবশ্য এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘মনগড়া’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে কানাডা।

এ ঘটনার পর ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটতে দেখা দেয়। 

প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে নিজেদের পৃথক রাষ্ট্র খালিস্তান বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ভারতীয় শিখদের একাংশ। সত্তরের দশকের শেষ থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে সেই আন্দোলন দমনে সফল হয় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।

ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নিজ্জর। তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন-এমন অভিযোগে তাকে সন্ত্রাসী তকমা দিয়েছিল ভারত। 

তবে ভারতে থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপে গিয়ে স্থায়ী হওয়া খালিস্তানপন্থি শিখরা এই আন্দোলন জারি রেখেছেন। হরদীপ সিং নিজ্জর ছিলেন খালিস্তানি টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিসের কানাডা শাখার সংগঠক এবং আধ্যাত্মিক নেতা। ভারতের অন্যতম বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নেতা হওয়ার কারণে নয়াদিল্লির একজন তালিকাভুক্ত ফেরার সন্ত্রাসীও ছিলেন হরদীপ।