যুক্তরাষ্ট্রের দর্শনীয় পার্কগুলোর মধ্যে অন্যতম ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্ক। এটি সেন্ট্রাল ক্যালিফোর্নিয়ার পশ্চিম সিয়েরা নেভাডায় অবস্থিত। পার্কটির দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সিয়েরা জাতীয় উদ্যান এবং উত্তর-পশ্চিমে স্ট্যানিসলস জাতীয় উদ্যান, যার ৯৫ শতাংশই বনভূমি।
নানান কারণে বিশ্বের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণস্থল ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্ক। তবে এ পার্কের এল ক্যাপিটান পর্বত বেয়ে নেমে আসা ‘অগ্নিঝরনা’ একনজর দেখতেই পর্যটকরা বেশি ভিড় জমান।
বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ঝলমলে (পরিচ্ছন্ন আকাশ) বিকেলে সূর্য ডোবার মুহূর্তে পাহাড় বেয়ে গলিত লাভার মতো পানি নেমে আসে ঝরনা থেকে, যা দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা।
মূলত ঝলমলে রোদের দিন শেষে গোধূলী বেলায় ডুবন্ত সূর্যের আলো একটি নির্দিষ্ট কোণে ঝরণার পানির ওপর পড়ে। ঠিক তখনই চোখ ধাঁধিয়ে দেখা দেয় ইয়োসেমাইটের ‘আগুনঝরা ঝরনা’।
তবে এবার অসময়ে দেখা গেলো ‘অগ্নিঝরনা’। ক্যালিফোর্নিয়ায় এবার রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দাদের। বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সেই দুর্দশা ভুলিয়ে দিতেই যেন অসময়ে দেখা মিলেছে ‘আগুন ঝরনা’।
অক্টোবরের মাঝামাঝিতে পাহাড়ের চূড়া বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে আগুনরঙা পানি। কিছুটা দূর থেকে দেখলে মনে হবে ঝরনা বেয়ে নেমে আসছে লাভা। কিন্তু বাস্তবে ওটা পানি। নিচে নামার পর ক্রমে তা পানির সাধারণ রঙে পরিণত হয়।
ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষ গত ২৭ অক্টোবর স্থানীয় একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ইয়োসেমাইট উপত্যকায় গেল ৩৬ ঘণ্টায় ১৫২ দশমিক ৪ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। উপত্যকায় অধিকতর উঁচু এলাকাগুলোতে কয়েক ফুট পর্যন্ত গভীর তুষারপাতও হয়েছে। ফলে ঝরনার সৌন্দর্য ফিরেছে বলে ধারণা তাদের।
কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিজুড়ে পার্কে ‘অগ্নিঝরনা’ দেখতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। পার্কে মানুষের ভিড়ে টিকিট দিতে হিমশিম খেতে হয়েছিল তাদের। বাধ্য হয়ে তারা অনলাইনে টিকিট বুকিং ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি ঘিরে তারা নতুন পরিকল্পনা করছিলেন। তবে অক্টোবরের ভারী বৃষ্টিতে এল ক্যাপিটান পর্বতের ঝরনা বেয়ে আগুনরঙা পানি নামতে দেখে তারাও অবাক। আগামীতে তারা অক্টোবর ঘিরেও পরিকল্পনা সাজাবেন বলে জানিয়েছেন।
ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কটির আয়তন ৭৮ হাজার ৪৩৬ একর, যা বর্গমাইলের হিসাবে এক হাজার ১৬৯ বর্গ মাইল। এ উদ্যানটি গ্রানাইট ক্লিফ, জলপ্রপাত, স্বচ্ছ জলপ্রবাহ, বিশালাকার সিকোয়া উপবন, হ্রদ, পর্বত, তৃণভূমি, হিমবাহ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ১৯৮৪ সালে উদ্যানটিকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন ও ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট।