আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে কিছু ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডের কর্মীরা। তবে এর সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া ডুবোজাহাজ ‘টাইটান’র সম্পর্ক আছে কি না তা যাচাই চলছে।
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আগ্রহী পাঁচ পর্যটক নিয়ে গত ১৮ জুন সাগরতলে যাওয়া টাইটান ছয় দিন ধরে নিখোঁজ। সেটির সন্ধানে চলছে ব্যাপক উদ্ধার তৎপরতা। বৃহস্পতিবার সারা দিনে যোগ হয়েছে আরও উন্নত সন্ধান সরঞ্জাম।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, যেটির তত্ত্বাবধানে টাইটান সাগরতলে যায়, সেই পোলার প্রিন্সের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এর মজুত অক্সিজেনের সরবরাহ দ্রুত ফুরিয়ে আসা নিয়ে উদ্বেগ-আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই অবস্থায় উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে কানাডার নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড ও বিমান বাহিনী।
জানা গেছে, গভীর সাগরে দূরনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চালিত দুটি যান বা আরওভি ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ফরাসি গবেষণা সংস্থা ইফ্রেমের ভিক্টর ৬০০০ নামে একটি আরওভি সমুদ্রের তলদেশে নেমেছে। এটি ফরাসি নৌযান আতালান্তি থেকে এটি পরিচালিত হচ্ছে।
ভিক্টর ৬০০০এর দুটি যান্ত্রিক হাত আছে যেগুলো মূল জাহাজ আতালান্তি থেকে খুবই সূক্ষ্ম ও সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা যাবে, যেমন কাটার কাজে বা আশপাশের জঞ্জাল পরিষ্কার করে এগিয়ে যাওয়ার কাজে।
দুজন পাইলট আতালান্তি জাহাজের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে চব্বিশ ঘণ্টা শিফটে কাজ করবেন। ভিক্টর ৬০০০ ডুবোযানটিতে বিশেষ আলো এবং ক্যামেরা আছে যা তারা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে দেখতে পাবেন।
ব্রিটেনের জার্সি থেকে জুলিয়েট নামে দ্বিতীয় একটি শক্তিশালী আরওভি ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। তবে সেটি পৌঁছাতে সময় লাগবে। এই ডুবোযানটি এর আগে আটলান্টিকের তলদেশে ঐতিহাসিক জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে প্রায় ২০০ ঘণ্টা কাজ করেছে।
আমেরিকান কোস্ট গার্ড জানাচ্ছে, কানাডার হরাইজন আর্কটিক জাহাজের সঙ্গে লাগোয়া একটি ডুবোযান সমুদ্রের তলদেশে পৌঁছেছে।
ব্রিটেনের সরকার রাজকীয় নৌবাহিনীর একটি সাবমেরিন, আরও কিছু অনুসন্ধান সরঞ্জাম এবং সাবমেরিন যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ ও সমুদ্রের নিচে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের উদ্ধার অভিযানে সাহায্যের জন্য পাঠাচ্ছে।
আটলান্টিক মহাসাগরে ১০ হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে সন্ধান কাজ চালানো হচ্ছে। সমুদ্রের নিচ থেকে ধাক্কার শব্দ পাওয়া গেলেও সন্ধান অভিযানের এলাকা এতটাই বিশাল যে আওয়াজ ঠিক কোন জায়গা থেকে আসছে তা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ বেশ কঠিন বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন।
যাদের নিয়ে গেল টাইটান
আটলান্টিক মহাসাগরের তিন হাজার ৮০০ মিটার বা সাড়ে ১২ হাজার ফুট গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আট দিনের এই ভ্রমণের জন্য আড়াই লাখ ডলার খরচ করতে হয়।
টাইটানের এই যাত্রায় গেছেন ব্রিটিশ ধনকুবের ৫৮ বছর বয়সী হামিশ হার্ডিং, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ৪৮ বছর বয়সী শাহজাদা দাউদ, তার ছেলে ১৯ বছর বয়সী ছাত্র সুলেমান দাউদ, ৭৭ বছর বয়সী ফরাসি অভিযাত্রী পল-হেনরি নারজিওলেট এবং ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী ৬১ বছর বয়সী স্টকটন রাশ।
১৯১২ সালে উদ্বোধনী যাত্রায় সমুদ্রে ভাসমান বিশালাকৃতির বরফ বা আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পর ডুবে গিয়েছিল টাইটানিক। যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন থেকে যাত্রা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যাচ্ছিল ওই সময়ের সবচেয়ে বৃহৎ, আধুনিক ও বিলাসবহুল জাহাজটি। দুর্ঘটনায় দেড় হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
বহু বছর জাহাজটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। অবশেষে ১৯৮৫ সালে কানাডার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলের প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় । এরপর থেকে জাহাজটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। হয়েছে কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘টাইটানিক’। দুর্ঘটনার শতাব্দী পরেও এই জাহাজ নিয়ে মানুষের আগ্রহ কমেনি।