রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দেশটির ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের বিদ্রোহকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কর্তৃত্বের ‘প্রকৃত ফাটল’ বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ওয়াগনারের বিদ্রোহ ঘিরে রাশিয়ায় যে সংকট দেখা দিয়েছে তা ভ্লাদিমির পুতিনের কর্তৃত্বের ‘প্রকৃত ফাটল’ উন্মোচন করেছে। ওয়াগনারের এই বিদ্রোহ পুতিনের কর্তৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছিল।
সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের টক শো ‘ফেস দ্য নেশন’-এ অংশ নিয়ে ব্লিঙ্কেন আরও বলেছেন, ওয়াগনার গ্রুপ ও এর নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের বিদ্রোহ ‘পুতিনের কর্তৃত্বের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসাবে’ আবির্ভূত হয়েছে। এই কারণে ওয়াগনারের বিদ্রোহ বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে।
রাশিয়ার চরম অস্থিতিশীল ওই পরিস্থিতি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কোনো কর্মকর্তা প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করলেন। যদিও গত শনিবার ওয়াগনারের বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মিত্রদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার এতদিন ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসনে মস্কোর হয়ে লড়ছিল। শনিবার ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’র মতো এই বাহিনীর প্রধান রুশ সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসেন।
হঠাৎ এই বিদ্রোহে রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘সশস্ত্র বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে প্রিগোজিন আমাদের দেশের পিঠে ছুরি মেরেছেন।’
বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়ে প্রিগোজিন বলেন, তার লক্ষ্য ‘সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো নয়, বরং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।’ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেও প্রিগোজিন তার বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অভ্যুত্থানের অভিযোগকে অবাস্তব বলে উল্লেখ করেন।
বিবিসি জানায়, রুশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ওয়াগনার গ্রুপের প্রধানের এই বিরোধ তৈরি হয়েছে বেশ আগে থেকেই। প্রিগোজিন অভিযোগ করে আসছিলেন যে রাশিয়ার সামরিক নেতারা তার ভাড়াটে যোদ্ধাদের যুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্র দিচ্ছে না। তার সেই অভিযোগ এখন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমোভের বিরুদ্ধে সরাসরি চ্যালেঞ্জে রূপ নিয়েছে। মূলত, এই দুই সামরিক নেতা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ পরিচালনা করছেন।
তাদের বিদ্রোহের ঘোষণায় গোটা মস্কো অঞ্চলে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়। জোরদার করা হয় নিরাপত্তা। এ ছাড়া পূর্বনির্ধারিত সব ধরনের বড় বড় অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
খবরে জানা যায়, ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধারা রোস্তভ ও মস্কোর মধ্যবর্তী একটি শহর ভরোনেজের সামরিক স্থাপনাও দখল করে নেন।
এর মধ্যে সংকট নিরসনে উদ্যোগী হন পুতিনের সবচেয়ে বড় মিত্র বলে পরিচিত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। তার মধ্যস্থতায় ওয়াগনার প্রধান ‘রক্তপাত এড়াতে’ সিদ্ধান্ত বদলে পিছুু হটার সিদ্ধান্ত নেন।
রুশ প্রেসিডেন্টের বাসভবন ক্রেমলিন বলছে, চুক্তি অনুযায়ী ওয়াগনার প্রধান কোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগের মুখোমুখি হবেন না। পাশাপাশি তার বাহিনীর যোদ্ধাদেরও সাধারণ ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। বাকি অভিযোগ-আপত্তির বিষয়ে বেলারুশে আলোচনা হবে।