তল্লাশি চৌকিতে এক কিশোর পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস ও এর আশপাশের শহর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। আগের দুই রাতে বিক্ষোভে সহিংসতার ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে আরও সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেজন্য প্যারিসে রাতে বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর পাশের শহর ক্লামার্তে জারি করা হয়েছে কারফিউ।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা থেকে প্যারিসের বাস ও ট্রেন সেবা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অঞ্চলটির প্রধান ভালেরি পেক্রিস এ বিষয়ে বলেছেন, ‘আমাদের যানবাহন গুণ্ডা ও ভাঙচুরকারীদের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না।’
প্যারিসের চেয়েও পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় এর পাশের শহর ক্লামার্তে কারফিউ জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত এই কারফিউ জারি থাকবে। প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এই বিশেষ প্রশাসনিক অবস্থা।
লিলে ও ট্যুরসের মতো শহরেও বাস-ট্রেন সেবা বন্ধের ঘোষণা আসছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। পরিস্থিতির অবনতি হলে জারি হতে পারে কারফিউও।
গত মঙ্গলবার সকালে প্যারিসের উপকণ্ঠ ন্যান্তেরে এলাকায় নাহেল এম নামে ওই কিশোরকে পুলিশ গুলি করে মারার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়ানোর পর থেকেই উত্তাল হয়ে পড়েছে ফ্রান্সের শহরগুলো। অভিযোগ উঠেছে, ট্রাফিক আইন ভাঙার অভিযোগে গাড়িতে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ (একেবারে সামনে) থেকে তাকে গুলি করেছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা।
সংবাদমাধ্যম বলছে, হলুদ রঙের মার্সিডিজ চালিয়ে যাওয়ার সময় তল্লাশি চৌকিতে নাহেলের গাড়ি থামান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। ওই সময়ই বাকবিতণ্ডার জেরে নাহেলকে গুলি করা হয়।
পুলিশ তখন দাবি করে, ওই কিশোরের গাড়ি থামানোর পর সে পুলিশ সদস্যদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দিতে চাইলে এক কর্মকর্তা আত্মরক্ষার্থে গুলি করেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে এ দাবির ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। ফুটেজে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্য গাড়িটির জানালায় ঝুঁকে আছেন এবং হাতের আগ্নেয়াস্ত্র চালকের দিকে তাক করা।
একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘গুলি তোমার মাথা ফুঁড়ে বের হবে...’। সেসময় স্টার্ট দিয়ে গাড়িটা চলতে শুরু করতেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে চালককে লক্ষ্য করে চলে গুলি। কয়েক মিটার এগিয়েই একটি খুঁটিতে সজোরে ধাক্কা খায় গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নাহেলের।
ভিডিও ফুটেজটি ছড়িয়ে পড়ার পর মঙ্গলবার বিকেল থেকেই আন্দোলন শুরু হয় ফ্রান্সের রাজপথে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, পুলিশকে গাড়িচাপা দেয়ার চেষ্টার মতো কিছুই ফুটেজে ধরা পড়েনি। তাহলে নাহেলকে কেন গুলি করে মারা হলো?
মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার রাতে বিক্ষোভ থেকে বিভিন্ন শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও পুলিশ স্টেশনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অর্ধশত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পোড়ানো হয়েছে কয়েক ডজন গাড়ি।
বিবিসি বলছে, এই সহিংসতার ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই কিশোরের মা মোনিয়া ননতেরের নেতৃত্বে প্যারিসের পাশের শহরে রাজপথে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করতে চাইলে সহিংসতা আরও ব্যাপক আকার নেয়। নিহত কিশোরের মায়ের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
অবশ্য ঘটনার পরপরই ৩৮ বছরের অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
সরকারি কৌঁসুলি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইচ্ছেকৃত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাকে বিস্তর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।