রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে বিতর্কিত গুচ্ছ বোমা দেওয়া হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে , এতে অস্বস্তিতে পড়েছে পশ্চিমা মিত্ররা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যশ বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ তাদের অস্বস্তির কথা জানিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার (৭ জুলাই) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে যে তারা ইউক্রেনকে বিতর্কিত গুচ্ছ বোমা দেবে। তবে অন্য দেশের ভূখণ্ডে এ বোমা ব্যবহার করতে পারবে না কিয়েভ।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এটিকে ‘খুব কঠিন সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য, কানাডা ও স্পেন বলেছে যে তারা গুচ্ছ বোমা ব্যবহারের বিরোধী। ১০০টিরও বেশি দেশ গুচ্ছ বোমা ব্যবহারে নিষিদ্ধ করেছে, কারণ এই বোমা বেসামরিক মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনে।
মার্কিন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ইউক্রেনে পাঠানো ক্লাস্টার বোমাগুলি যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যবহৃত বোমাগুলির চেয়ে অনেক কম বার ব্যর্থ হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ক্লাস্টার বোমার উৎপাদন, মজুত ও ব্যবহার বন্ধে ১২৩টি দেশ একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সই করেছে। এসব দেশের তালিকায় যুক্তরাজ্যও রয়েছে। যুক্তরাজ্য এ অস্ত্রের ব্যবহারকে সবসময় নিরুৎসাহিত করে।
এ বিষয়ে স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রোবেলস সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে কিছু কিছু অস্ত্র সরবরাহ করা যাবে না, এ বিষয়ে তার দেশ দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার গুরুত্ব আমরা উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু ক্লাস্টার বোমা দিয়ে তা নিশ্চিত করা যাবে না।
কানাডিয়ান সরকার বলেছে, বহু বছর ধরে অবিস্ফোরিত থাকতে পারে ক্লাস্টার বোমা। তাই এ বোমার ব্যবহার শিশুদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে কানাডা সরকারের উদ্বেগ রয়েছে। এ ছাড়া ক্লাস্টার বোমার ব্যবহার বন্ধে আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে চলার পক্ষে কানাডা।
এদিকে, চুক্তির স্বাক্ষরকারী জার্মানি বলেছে, তারা ইউক্রেনকে এই ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করবে না, তবে তারা আমেরিকার অবস্থান বুঝতে পেরেছে বলে জানান।
জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টেফেন হেবেস্ট্রিট সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা নিশ্চিত যে আমাদের মার্কিন বন্ধুরা এই ধরনের গোলাবারুদ সরবরাহের সিদ্ধান্তকে হালকাভাবে নেয়নি।
এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধ হয়তো একদিন থেমে যাবে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এ অস্ত্র বেসামরিক মানুষের জীবনের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হয়ে রয়ে যাবে।
যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ক্লাস্টার বোমার উৎপাদন ও ব্যবহার না করার চুক্তিতে সই করেনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও রাশিয়া ।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন ক্লাস্টার বোমা শুধুমাত্র শত্রুর প্রতিরক্ষা লাইন ভাঙার জন্য ব্যবহার করা হবে।