আফগানিস্তানে বিউটি পারলার বন্ধে চাকরি হারাবে ৬০ হাজার মানুষ

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 04:26:53

তালেবানের নির্দেশে আজ সোমবার থেকে আফগানিস্তানে নারীদের রূপচর্চাকেন্দ্র (বিউটি সেলুন বা বিউটি পারলার) বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দেশটিতে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ চাকরি হারাবে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

দুই বছর আগে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর নারীদের রূপচর্চাকেন্দ্র চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু গত মাসে অবস্থান পরিবর্তন করে তালেবান। তালেবান শাসক গোষ্ঠী তাদের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নির্দেশে রাজধানী কাবুল ও দেশের অন্যান্য প্রদেশে অবস্থিত নারীদের সব বিউটি পারলার বন্ধের ঘোষণা দেন।

এই সিদ্ধান্তটি আফগান নারীদের জন্য খোলা জায়গাগুলিকে আরও সীমাবদ্ধ করবে।

তালেবান শাসকগোষ্ঠী দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর নারী ও মেয়েদের স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া ও এনজিওতে চাকরি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এছাড়াও, নারীরা পার্ক, সিনেমা হল বা অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রেও যেতে পারেন না। এসব বিধিনিষেধের সঙ্গে যোগ হল পারলার বন্ধের নির্দেশ।

২৩ বছর বয়সী জারমিনা। যখন বিউটি পারলার বন্ধের ঘোষণা আসে তখন তিনি একটি তার চুল রং করছিলেন। দুই সন্তানের এই মা বলেন, এ খবর শোনার পর বিউটি পারলারের মালিক কাঁদতে শুরু করে। সে তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।

আমি আয়নার দিকেও তাকাতে পারছিলাম না। পারলারের সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েছিল।

জারমিনা তালেবানের রক্ষণশীল দুর্গ দক্ষিণ আফগানিস্তানের কান্দাহারে বাস করেন। তিনি বলেন, এখানে পুরুষদের তাদের মেয়েদের মেক-আপ করা বা বিউটি ট্রিটমেন্টে যেতে নিষেধ করা সাধারণ ব্যাপার। অধিকাংশ নারী এখানে বোরকা বা হিজাব পরে ঘুরে বেড়ান। আমরা এটাকে আমাদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছি বলেন তিনি।

জারমিনার বিয়ে হয়েছিল ১৬ বছর বয়সে। তিনি বলেন, বিউটিশিয়ানের সঙ্গে আড্ডাই ছিল তাকে স্বাধীনতার বিরল অনুভূতি দেওয়ার জন্য। কারণ তাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হতো না। কিন্তু বছরে দুই বা তিনবার তিনি পারলারে আসতে তার স্বামীকে রাজি করাতে পেরেছিলেন। নারীদের স্বাধীনতা ক্রমাগতভাবে সংকুচিত হয়েছে বলেছেন তিনি।

জারমিনা বলেন, এখন নারীরা শুধু বেকারত্ব, বৈষম্য এবং দারিদ্র্য নিয়ে কথা বলে।

রায়হান মুবারিজ নামের এক মেকআপ শিল্পী টোলোনিউজকে বলেন, পুরুষদের চাকরি নেই। যখন পুরুষরা তাদের পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারে না, তখন নারীরা বাধ্য হয়ে একটুকরো রুটির সংস্থান করতে বিউটি পারলারে চাকরি নেয়। এখন এটা যদি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা কী করবো?

এক নারী মেকআপ আর্টিস্ট নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, যদি বাড়ির পুরুষদের কাজ থাকে, তাহলে আমরা বাসা থেকে বের হই না। আমাদের কী করার আছে? আমরা যদি না খেয়ে মারা যাই, আপনারা কী করবেন? আপনারা সেটাই চান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর