চীনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ফিলিপাইন

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 16:07:10

বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের জাহাজকে চীনা কোস্টগার্ড কর্তৃক অবরোধ ও সেগুলোর বিরুদ্ধে জলকামান ব্যবহারের একদিন পর বেইজিংয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ম্যানিলা।

এ খবর নিশ্চিত করেছেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র।

মার্কোস আজ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্র সচিব আজ চীনের রাষ্ট্রদূত হুয়াংকে তলব করে দক্ষিণ চীন সাগরে কি ঘটেছে তার ছবি, ভিডিও প্রমাণ হিসাবে তার কাছে জমা দিয়েছেন। এখন আমরা তাদের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি।’

ফিলিপাইন অভিযোগ করেছে যে, স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের সেকেন্ড থমাস শোলে অবস্থানরত তার সামরিক কর্মীদের জন্য খাদ্য, জল, জ্বালানি এবং অন্যান্য রসদ বহনকারী জাহাজগুলোকে আটকাতে গত শনিবার জলকামান ব্যবহার করেছে চীনের কোস্টগার্ড।

ম্যানিলা বেইজিংয়ের পদক্ষেপকে বেআইনি, অতিরিক্ত এবং বিপজ্জনক বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

আজ সোমবার ফিলিপাইনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ম্যানিলা সেকেন্ড থমাস শোল দ্বীপ কখনো পরিত্যাগ করবে না, যা ফিলিপাইনের পালাওয়ান দ্বীপ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

ফিলিপাইনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জোনাথন মালায়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কখনই সেকেন্ড থমাস শোলকে ত্যাগ করব না। আমরা এর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

উল্লেখ্য, দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরোটাই নিজেদের বলে দাবি করে বেইজিং। এই সাগরের মাধ্যমে বছরে ট্রিলিয়ন ডলার বাণিজ্য হয়। কিন্তু, ২০১৬ সালের আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে বেইজিং যে দাবি করেছে তার কোনও আইনি ভিত্তি নেই।

চীন বলেছে, অবৈধভাবে তার জলসীমায় প্রবেশ করায় ফিলিপাইনের জাহাজগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে তারা।

এদিকে, ফিলিপাইন বলেছে, তারা দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অধিকার নিশ্চিত করবে।

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘চীন বলছে এটি তাদের, তাই তারা এটিকে রক্ষা করছে। কিন্তু, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে বলছি, আমরা এটির মালিক, তাই আমরা এটিকে রক্ষা করছি।’

আল-জাজিরার বার্নাবি লো ম্যানিলা থেকে জানিয়েছে, ওই ঘটনায় ফিলিপাইনের চারটি জাহাজ আক্রান্ত হয়।

বেইজিং থেকে আল-জাজিরার প্রতিনিধি ক্যাটরিনা ইউ বলেছেন, নিজস্ব আঞ্চলিক জলসীমায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে মনে করে চীন।

ক্যাটরিনা ইউ বলেছেন, চীনের কোস্টগার্ডে একটি বিবৃতি অনুসারে, ফিলিপাইনের জাহাজগুলো তাদের ভূখণ্ডে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং তাদের প্রতিরোধ করা সম্পূর্ণরূপে চীনের অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই এ বিষয়ে বেইজিংয়ের কোনো অনুশোচনা নেই।

ক্যাটরিনা ইউ আরও জানান, চীনা কোস্টগার্ডের জলকামান ব্যবহারের ঘটনা এটিই প্রথমবার নয়। ২০২১ সালে অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটেছিল। সম্প্রতি জুন মাসেও চীনা জাহাজ এবং ফিলিপাইনের জাহাজগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট গতকাল রবিবার চীনা কর্মকাণ্ডের নিন্দা করে বলেছে, বেইজিং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও বেইজিংয়ের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে।

দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে ম্যানিলা ও বেইজিংয়ের সামুদ্রিক বিরোধের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে বিনিয়োগ আকর্ষণের আশায় বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চেয়েছিলেন। তাই তিনি এই শক্তিশালী প্রতিবেশীর সমালোচনা করতে অনিচ্ছুক ছিলেন।

অন্যদিকে, মার্কোস গত বছরের জুনে দুতের্তের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর থেকে জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি চীনের কাছে তার দেশের সামুদ্রিক অধিকার পদদলিত হতে দেবেন না।

তিনি প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে ফিলিপাইনের সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক এবং দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর