চাঁদের বুকে পানি খুঁজতে দীর্ঘ ৪৭ বছর পর মহাকাশযান পাঠাল রাশিয়া। ১৯৭৬ সালের পর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে লুনা-২৫ নামে মহাকাশযানটি পাঠাল রাশিয়া।
রাশিয়ার আমুর অঞ্চলে অবস্থিত ভস্টকনি উৎক্ষেপণকেন্দ্র থেকে স্থানীয় সময় শুক্রবার (১১ আগস্ট মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়।
রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত চাঁদে মানব বসতি গড়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে উপগ্রহটিতে পানির সন্ধান চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। এবার সেই দৌড়ে যোগ দিল রাশিয়ায়। দেশটির মহাকাশযান লুনা-২৫ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পানির উৎসের সন্ধান করবে।
মহাকাশযানটি পাঁচ দিনের মধ্যে চন্দ্রের কক্ষপথে পৌঁছাবে বলে আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তারপর এটি চন্দ্রের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অবতরণের আগে সঠিক স্থানটি বেছে নিতে তিন থেকে সাত দিন সময় নেবে।
তবে রুশ মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান রসকসমস জানিয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২১ আগস্ট লুনা-২৫ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে। যদি অবতরণ সফল হয় তবে তা ভারতীয় মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ এর দুদিন আগেই চাঁদের মেরুতে অবতরণ করবে। অথচ চন্দ্রযান-৩ লুনা-২৫ এর সপ্তাহখানেক আগে পৃথিবী থেকে উৎক্ষিপ্ত হয়েছে।
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে যাচ্ছে মহাকাশযান। এর আগে, চাঁদে পাঠানো সব মহাকাশযানই উপগ্রহটির নিরক্ষীয় রেখা বা এর আশপাশের অঞ্চলে অবতরণ করেছে।
ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সম্প্রতি এই অভিযান মস্কো পরিচালনা করছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
১৯৬৯ সালে চাঁদে প্রথম পা রাখেন মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং। তবে চাঁদে প্রথম পৌঁছানো মহাকাশযান ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের। মিশনটি লুনা-২ নামে পরিচিত যা ১৯৫৯ সালে চাঁদে অবতরণ করে। লুনা-৯ নামের আরেকটি মিশন পরিচালিত হয় ১৯৬৬ সালে। এটি প্রথমবার চাঁদে সফট ল্যান্ডিংকারী মিশন ছিল।
কিন্তু মস্কো তখন মঙ্গল গ্রহে অনুসন্ধানের দিকে মনোনিবেশ করে এবং ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে রাশিয়া পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে মিশন পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রধান শক্তিগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাঁদে অভিযান নিয়ে কাজ করছে। যদিও গত বছর একটি জাপানি চন্দ্র অভিযান এবং ২০১৯ সালে একটি ইসরায়েলি অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এখনো কোনো দেশ সফট ল্যান্ডিং করতে পারেনি। ভারতীয় মিশন চন্দ্রযান-২ ২০১৯ সালে এটি করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। রুক্ষ ভূখণ্ড থাকায় চাঁদের এই অঞ্চলে অবতরণ করা কঠিন। তবে এই অংশে পানির সন্ধান ঐতিহাসিক ঘটনা হবে নিঃসন্দেহে।