জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে ২৪ ঘন্টা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরতে হচ্ছে ইকুয়েডরের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আন্দ্রেয়া গঞ্জালেজকে।
বিবিসির নিউজআওয়ার প্রোগ্রামে বুধবার (১৬ আগস্ট) এ কথা জানান তিনি।
গত বুধবার (৯ আগস্ট) ইকুয়েডরের নির্বাচনের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ফার্নান্দো ভিলাভিসেনসিও রাজধানী কুইটোতে একটি প্রচার সমাবেশ শেষে আততায়ী হামলায় নিহত হন।
এরপরই প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করার ঘোষণা দেন ৩৬ বছর বয়সি আন্দ্রেয়া। পেশায় তিনি একজন সাংবাদিক।
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা আমার কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। বন্ধুকে এভাবে হারানোটা আমার জন্য খুবই কষ্টদায়ক। আমি ২৪ ঘন্টা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে থাকি।’
ফার্নান্দো ভিলাভিসেনসিও একজন সাংবাদিক এবং ইকুয়েডরের জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ১১ দিন আগে রাজধানীতে নির্বাচনী প্রচারণা সমাবেশ শেষে গাড়িতে উঠার সময় তিনি বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হন।
পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে একজন হামলাকারী নিহত হলেও অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।
সরকার এবং বিভিন্ন কর্মকর্তাদের অপরাধের বিরুদ্ধে তদন্ত করা ও কথা বলা গুটি কয়েক প্রার্থীর মধ্যে একজন ছিলেন এই ভিলাভিসেনসিও।
আন্দ্রেয়া বলেন, ‘আমরা একটি মাদক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত যে, এটি একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। গ্যাং ওয়ার্ক বা সম্মিলিত অপরাধের চেয়েও বেশি ভয়ংকর। এই ঘটনার মধ্যে একটি রাজনৈতিক অনুভূতি, একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।’
ঘটনার তিন দিন আগে ফার্নান্দো স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, তার কাছে খুব সূক্ষ্ণ তথ্য রয়েছে, যা এই নির্বাচনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে৷ তবে সেই তথ্য কখনই প্রকাশ পায়নি৷
আন্দ্রেয়া বলেন, ইকুয়েডরের রাজনীতিতে সহিংসতার এই ঘটনাগুলো স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
প্রাথমিকভাবে দল তাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ভিলাভিসেনসিওর স্থলাভিষিক্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু, পরে দলের কর্মকর্তারা আন্দ্রেয়াকে রানিং সঙ্গী হিসেবে রেখে এবং ভিলাভিসেনসিওর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ক্রিশ্চিয়ান জুরিতাকে বেছে নেয়।
ওই হামলার পর থেকে সহিংসতা বন্ধ হয়নি। এসমেরালডাসের বামপন্থী নাগরিক বিপ্লব পার্টির স্থানীয় নেতা পেড্রো ব্রায়োনেস সোমবার (১৪ আগস্ট) তার বাড়িতে মোটর সাইকেলে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন।
আন্দ্রেয়া দু:খপ্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে কেউ এই স্তরের সহিংসতার মুখোমুখি হতে পারে।’
জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া বর্তমানে একটি বিশাল ঝুঁকিপূর্ণ কাজ৷ যখনই ট্র্যাফিক লাইটে থামবেন তখনই আপনার গাড়ির পাশে গুলি বা বোমা হামলা হতে পারে৷ ইকুয়েডর বর্তমানে যে মাত্রার সহিংসতার সম্মুখীন হচ্ছে, তা আগে কখনো দেখা যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু, যে স্বপ্ন আমরা দেখেছি, তা অর্জনের প্রচেষ্টা বন্ধ করব না।’