সাজানো বিমান দুর্ঘটনার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা গ্রুপ ভাগনারের প্রধান অলিগার্চ ইয়েভজেনি প্রিগোশিনকে। আর সেই হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশেই। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) এমনটাই দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের সাবেক প্রধান ড্যানিয়েল হফম্যান।
আল-জাজিরা জানিয়েছ, এক সময় মস্কোসহ পুরো রাশিয়াজুড়ে সিআইএ নেটওয়ার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হফম্যান বলেছেন, ‘এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, পুতিনের নির্দেশেই প্রিগোশিনকে হত্যা করা হয়েছে। ওই উদ্দেশ্যেই জুন মাসে ব্যর্থ বিদ্রোহের পরেও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। এমনকি, তাকে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরার অধিকারও দেওয়া হয়েছিল।’
সোভিয়েত যুগে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির প্রধান ছিলেন পুতিন। গুপ্তহত্যায় বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্টের বিশেষ প্রশিক্ষণ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন হফম্যান।
প্রসঙ্গত, বুধবার মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী একটি বেসরকারি সংস্থার ‘এমব্রেয়ার লিগ্যাসি ৬০০’ বিমান পশ্চিম রাশিয়ার তেভর অঞ্চলের কুজ়েনকিনো গ্রামের কাছে ভেঙে পড়ে। বিমানটিতে প্রিগোশিনসহ মোট ১০ জন ছিলেন। তাদের সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। অথচ, ওড়ার আগে নিয়মমাফিক ফিট সার্টিফিকেট ছিল বিমানটির। এমনকি, ভেঙে পড়ার মাত্র ৩০ সেকেন্ড আগে পর্যন্ত বিমানের পাইলটের সঙ্গে ইন্টারনেটনির্ভর রাডার ব্যবস্থার যোগাযোগ ছিল।
প্রিগোশিন ছাড়াও ওই বিমানে ছিলেন ওয়াগনার বাহিনীর আরেক গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডার দিমিত্রি উৎকিন। গত জুনে পুতিনবিরোধী বিদ্রোহে তিনিও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার প্রিগোশিন ভিডিও বার্তায় জানিয়েছিলেন, এখন আফ্রিকার মরুভূমিই তার ঠিকানা। ভাগনার বাহিনীতে নতুন করে যোদ্ধা নিয়োগের কথা ঘোষণা করে ইচ্ছুকদের যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নম্বরও দিয়েছিলেন তিনি। ভিডিও দেখে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয়েছিল, প্রিগোশিন এখন সাহারা মরুভূমি লাগোয়া কোনও দেশে রয়েছেন। তবে ঠিক কোথায় তিনি রয়েছেন, সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।
আফ্রিকা থেকে ভিডিও বার্তায় প্রিগোশিন বলেছিলেন, ‘এখানে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির বেশি। তবে আমরা খুশিতেই রয়েছি। ভাগনার এখন সব মহাদেশে রাশিয়ার গৌরব বাড়াতে অবদান রাখছে। এবার আফ্রিকার মানুষকে মুক্তি এবং আনন্দের স্বাদ দিতে এবং তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করব। আমরা ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল কায়দাসহ সব জঙ্গিদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হব।’
গত জুন মাসে ভাগনার যোদ্ধারা ইউক্রেন সীমান্তবর্তী একাধিক এলাকার দখল নিয়েছিল। এরপর তারা রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উদ্দেশে অভিযান শুরু করে। কিন্তু, ওই সময় পুতিন দ্রুত নিজের অনুগত রুশ সেনাকে সামনে রেখে বিদ্রোহীদের কোণঠাসা করেন। প্রিগোশিন এরপরে রাশিয়া থেকে বেলারুশে চলে যান বলে বিভিন্ন পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল।
পুতিনঘনিষ্ঠ বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার লুকাশেঙ্কো দাবি করেছিলেন, তিনিই মস্কোর সঙ্গে ভাগনার বাহিনীর সমঝোতা করিয়েছেন। এরপর জুলাই মাসের শেষ দিকে অভিযোগ ওঠে পুতিনের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে ওয়াগনার প্রধানকে। কিন্তু, ওই গুঞ্জণ মিথ্যা প্রমাণিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করে বেঁচে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি।