উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন তার রাশিয়া সফরের শেষভাগে মস্কোর কৌশলগত হাইপারসনিক 'কিনজাল' ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম বোমারু বিমানসহ রাশিয়ার মহাকাশ, সামরিক এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সুবিধাগুলো পরিদর্শন করেছেন।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রিমর্স্কি অঞ্চলের গভর্নর ওলেগ কোজেমিয়াকো শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভ্লাদিভোস্টকের প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে আর্টিওম শহরে কিমের আগমনের ঘোষণা দেন।
কোজেমিয়াকো একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে হাস্যোজ্জ্বল কিম তার ব্যক্তিগত, সাঁজোয়া ট্রেন থেকে নামছেন এবং শিশুরা তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।
আর্টিওমে পৌঁছানোর পরে কিম শহরের ঠিক বাইরে ভ্লাদিভোস্টক বিমানবন্দরে যান, যেখানে তাকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং অন্যান্য সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তারা তাকে পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম কৌশলগত বোমারু বিমান এবং অন্যান্য যুদ্ধবিমান দেখান।
কিমকে রাশিয়ার বায়ুচালিত হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কিনজলও দেখান শোইগু।
উল্লেখ্য যে, ৪৮০ কেজি ওজনের কিনজল পেলোড বহন করার পর ১,৫০০ থেকে ২,০০ কিলোমিটার দুরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম।
কিমকে কৌশলগত বোমারু বিমানের তিনটি মডেলও দেখানো হয়েছে। সেগুলো হলো-টিইউ-১৬০, টিইউ-৯৫ এবং টিইউ-২২এম৩এম।
রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি অনুসারে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে রাশিয়া ওই বিমানগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে নিয়মিত ব্যবহার করে আসছে।
শোইগু সেগুলোর একটি বিমান সম্পর্কে কিমকে বলেন, ‘এটি মস্কো থেকে জাপানে উড়ে গিয়ে হামলা চালিয়ে আবার ফিরে আসতে পারে।’
এ সময় কিভাবে বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় তা জিজ্ঞেস করতে দেখা যায় কিমকে।
রাশিয়ার একজন কর্মকর্তা তাকে বলেন, কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো রাশিয়ার পারমাণবিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান অংশ।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাশিয়ার প্রধান ভোস্টোচনি সসমোড্রোম মহাকাশ বন্দরে রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি শীর্ষ বৈঠকের মাধ্যমে রাশিয়ায় তার সফর শুরু করেন কিম।
পিয়ংইয়ংয়ের সরকারি কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি শনিবার জানিয়েছে যে, কমসোমলস্ক-অন-আমুরে বিমান কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় কিম রাশিয়ার দ্রুত অগ্রসরমান বিমান প্রযুক্তি প্রদর্শণের জন্য মস্কোর প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন।
রাশিয়ার মন্ত্রিসভা গত শুক্রবার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে কিমকে দেখা যাচ্ছে একটি উঁচু প্ল্যাটফর্মে একটি এসইউ-৫৭ যুদ্ধবিমানের ককপিটের দিকে তাকিয়ে আছেন এবং পাইলটের কথা শুনছেন।
এ সময় প্রদর্শনী ফ্লাইটের পরে একটি এসইউ-৩৫ ফাইটার জেট অবতরণ করার সময় কিম হাততালিও দেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কিমের সফরের পরে রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার সেকেলে বিমান বাহিনীর আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালের সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পাঠানো যুদ্ধবিমানগুলির উপর নির্ভর করে উত্তর কোরিয়া।
শনিবার পরে কিমের ভ্লাদিভোস্টকে রাশিয়ান নৌজাহাজ পরিদর্শনেরও কথা রয়েছে।
পুতিন এবং কিম গত বুধবার মিলিত হওয়ার সময় সামরিক বিষয়, ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং সহযোগিতাকে আরও গভীর করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
কিন্তু, রাশিয়ার নেতা জাতিসংঘ কর্তৃক উত্তর কোরিয়ার উপর আরোপিত দীর্ঘস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন যে, ‘মস্কো কিছুই লঙ্ঘন করতে যাচ্ছে না।’
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য সতর্ক করেছে যে, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়া কামান ও রকেটের সরবরাহ পাওয়ার জন্য আলোচনায় অগ্রসর হয়েছে, যা ইউক্রেনের যুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে মস্কো ।