কানাডার পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে গণহত্যার জন্য রাশিয়ার প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, জেলেনস্কি শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) অটোয়ায় পরিপূর্ণ হাউস অফ কমন্সকে বলেছেন, রাশিয়া বরাবরের মতো ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণ করতে আগ্রহী এবং এটি করার জন্য মস্কো গণহত্যাসহ সব উপলব্ধ উপায়ই ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, ‘দখলদাররা গণহত্যাসহ ইউক্রেনের সঙ্গে যা করছে, তা বর্নণাতীত। কিন্তু, যখন আমরা জিততে চাই, যখন আমরা বিশ্বকে আমাদের সমর্থন করার জন্য আহ্বান জানাই, তখন সেটি কোনও সাধারণ অনুরোধ নয়, বরং সেটি হলো লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানোর বিষয়ে।’
জেলেনস্কির ওই জ্বালাময়ী বক্তৃতাকে বিশ্বনেতাদের কাছে তার সর্বশেষ আবেদন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি চলতি সপ্তাহের শুরুতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে হাজিরা দিয়ে উত্তর আমেরিকায় একটি ঝটিকা সফর শেষ করেছেন।
কিন্তু, কানাডায় ইউক্রেনের নেতার উষ্ণ অভ্যর্থনার একদিন আগে ওয়াশিংটন, ডিসিতে মার্কিন আইনসভা পরিদর্শন করার সময় তার অভিজ্ঞতা ছিলো সম্পূর্ণ বিপরীত।
সেখানে জেলেনস্কি রিপাবলিকান পার্টির বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। কারণ, রিপাবলিকান পার্টি ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন কমানোর বিষয়ে সোচ্চার হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কথা বলার অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে হাউস রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাকার্থি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাছে সময় ছিল না।’
কানাডায় নেতারা অবশ্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্টের সামনে দ্বিতীয় ভাষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিরল সম্মান দিয়েছেন।
রাশিয়া তার দেশে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করার কয়েক সপ্তাহ পরে তিনি ২০২২ সালের মার্চ মাসে ভিডিওর মাধ্যমে কানাডার আইনসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন।
জেলেনস্কি ছাড়া মাত্র কয়েকজন বিশ্বনেতাই কেবল কানাডার পার্লামেন্টের সামনে দুইবার কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন।
তাদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, যুক্তরাজ্যের মার্গারেট থ্যাচার এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার এবং রোনাল্ড রিগ্যানের মতো উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব।
এদিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শুক্রবার ইউক্রেনের জন্য বর্ধিত সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ট্রুডো বলেছেন, ‘পুতিন যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে আমরা ইউক্রেনকে প্রায় নয় বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার সামরিক, আর্থিক এবং মানবিক সহায়তা দিয়েছি। আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি তৈরি করছি, যা ইউক্রেনকে স্থির সমর্থন প্রদান করবে। ওই দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতির মধ্যে ৫০টি সাঁজোয়াযানের জন্য তিন বছরের মধ্যে ৬৫০ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা দ্বারা পরিচালিত মানসিক স্বাস্থ্য উদ্যোগের জন্যও তহবিল ঘোষণা করে ট্রুডো বলেছেন, ‘ইউক্রেনীয়দের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর এই যুদ্ধের ক্ষতি অপরিমেয়।’
ট্রুডো বলেন, ‘এমন কিছু দেশ আছে যারা নিয়ম লঙ্ঘন করছে। অনিশ্চয়তা এবং পুনরুত্থিত শক্তি প্রতিযোগিতার এই যুগে নিয়ম আমাদের রক্ষা করবে। আমাদের অবশ্যই তাদের পক্ষে ওকালতি করতে হবে, তাদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের পাশে থাকতে হবে। আমরা কীভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করি তার বিচার করবে ইতিহাস।’
অন্যদিকে জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার এই আগ্রাসন অবশ্যই আমাদের বিজয়ের মাধ্যমে শেষ করতে হবে। মস্কোকে অবশ্যই হারাতে হবে।