গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে; এরপরে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই যুদ্ধ। ভয়াবহ এই যুদ্ধে দুই দেশই কমবেশি সেনা হারিয়েছে। এমন অবস্থায় গত বছরের শেষের দিকে স্কুলে স্কুলে শিশু শিক্ষার্থীদের অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যার অংশ হিসেবে বর্তমানে রুশ স্কুলগুলোতে শিশু শিক্ষার্থীদের অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কুল শিক্ষার্থীদের অস্ত্র ব্যবহারের কলাকৌশল প্রশিক্ষণ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। সাবেক সোভিয়েত আমলে স্কুলে স্কুলে এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে পুরনো আমলের সেই প্রশিক্ষণ আবার চালু করল কর্তৃপক্ষ। রাশিয়ার স্কুলের খেলার মাঠগুলো এখন হয়ে উঠছে প্যারেড গ্রাউন্ড।
ইতিমধ্যে রাশিয়ায় নার্সারি গ্রেডের শিশুরা সামরিক ইউনিফর্ম পরে মার্চিং অনুশীলনে অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া তুলনামূলক বড় বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে কিভাবে পরিখা খনন করতে হয়, গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে হয় এবং গোলাবারুদ দিয়ে গুলি করতে হয়।
সিএনএন জানায়, দেশটির সকল স্কুলগুলোতে শিশু-কিশোরদের ‘স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা’ গঠন করা হচ্ছে এবং মাতৃভূমির প্রতিরক্ষার ওপর জোর দেওয়ার জন্য জাতীয় পাঠ্যক্রম পর্যন্ত পরিবর্তন করা হচ্ছে। যাকে বলে রাশিয়ার শিশুরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
এক ঘোষণায় রুশ শিক্ষামন্ত্রী সের্গেই ক্রাভতসোভ জানান, রাশিয়ান স্কুল এবং কলেজগুলোতে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার ‘সামরিক-দেশপ্রেমিক’ ক্লাব রয়েছে প্রচুর লোক তাদের কাজে অংশ নেয়।
তিনি বলেন, এই ক্লাবগুলো সরকারের বহুমুখী প্রচেষ্টার অংশ। এর আওতায় স্কুল পাঠ্যক্রমের আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাঠ্যক্রমের আওতায় সামরিক-দেশপ্রেমিক মূল্যবোধের উপর বাধ্যতামূলক ক্লাস আছে। এছাড়া হালনাগাদ ইতিহাসের বইগুলোতে রাশিয়ার সামরিক বিজয়ের কথা বলা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন
গত আগস্টে পুতিন স্কুলগুলোতে ‘মাতৃভূমির সুরক্ষা এবং প্রতিরক্ষার মৌলিক বিষয়গুলো জানতে একটি নতুন বাধ্যতামূলক কোর্স চালু করার জন্য আইনে স্বাক্ষর করেন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশটির শিক্ষামন্ত্রণালয় সামরিক ইউনিটে ভ্রমণ, সামরিক-ক্রীড়া গেমস, প্রবীণদের সঙ্গে আলোচনা ও ড্রোনের বিষয়ে জানতে স্কুলগুলোতে একটি কোর্স অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রচার করে।
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘অভিজ্ঞ সামরিক ইউনিট অফিসার বা প্রশিক্ষকদের নির্দেশনায় ফায়ারিং লাইনে’ লাইভ গোলাবারুদ ব্যবহার করতে শেখানো হচ্ছে।
সিএনএনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাত বা আট বছর বয়সী শিশুরা মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। জুলাই মাসে বেলগোরোডের শিশুরা যে অনুশীলনে অংশ নিয়েছিল তার মধ্যে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ব্যবহার, বিচ্ছিন্ন একটি মেশিনগান একত্রিত করা এবং প্রতিবন্ধকতা কীভাবে টপকানো যায় তার প্রশিক্ষণ। বেলগোরোডের গভর্নর ব্যাচেস্লাভ গ্ল্যাডকভ নিয়মিত স্কুলছাত্রী এবং স্কুলে যাওয়া শুরু করবে এমন শিশুদের অনুশীলন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
মে মাসে ক্রাসনোদরে সাত বা আট বছর বয়সী কয়েক ডজন শিশু সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর ইউনিফর্ম পরে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে নিয়ে প্যারেড করেছে। ভোলোগদা শহরে অনুষ্ঠিত একটি কুচকাওয়াজে একটি ছোট শিশু অভিবাদন জানিয়ে একজন কর্মকর্তাকে বলেছিল, কমরেড প্যারেড কমান্ডার! কুচকাওয়াজ প্রস্তুত। আমি কমান্ডার উলিয়ানা শুমেলোভা।