ইউক্রেনের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়ার পাঠানো ইরানের তৈরি ৪০টি শাহেদ ড্রোনের মধ্যে ৩০টি ড্রোন কিয়েভের বিমানবাহিনী ভূপাতিত করেছে বলে শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দাবি করেছে দেশটির আঞ্চলিক ও সামরিক কর্মকর্তারা।
ইউক্রেনের দক্ষিণ সামরিক কমান্ডের বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে, ভূপাতিত করা ৩০ টি ড্রোনের মধ্যে ২০টি ড্রোন মধ্য ভিনিশিয়া অঞ্চলে এবং বাকি ১০টি দক্ষিণে ওডেসা এবং মাইকোলাইভ অঞ্চলে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়।
দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের মুখপাত্র নাটালিয়া হুমেনিউক ইউক্রেনের টিভিকে বলেছেন, রাশিয়া দানিয়ুব নদীর শস্যবন্দরের অবকাঠামোতে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে এবং অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা করছে।
প্রসঙ্গত, গত জুলাইয়ে শস্যচুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে দানিউব নদীর শস্যবন্দর, ওডেসা বন্দরসহ ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি অবকাঠামোতে বিমান হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া।
ভিন্নিতসিয়ার আঞ্চলিক গভর্নর সেরহি বোরজভ বলেছেন, মস্কোর ড্রোন এই অঞ্চলের একটি অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে, যার ফলে বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
তবে, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আর কোনো তথ্য দেননি তিনি। আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, দক্ষিণ খেরসন অঞ্চলে তিনজন আহত হয়েছে।
এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বৈঠক করেছেন চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ।
রয়টার্স জানিয়েছে, পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় চেচেন অঞ্চলের অবদান নিয়ে আলোচনা করেছেন কাদিরভ।
প্রসঙ্গত, মস্কোর স্বার্থ রক্ষায় চেচনিয়াকে নির্মমভাবে পরিচালনার জন্য পুতিনের কাছ থেকে বিস্তৃত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন কাদিরভ।
মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে একটি পোস্টে কাদিরভ লিখেছেন, পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেনে চেচেন যোদ্ধাদের ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
তিনি আরও লিখেছেন, আলোচনায় অন্য কিছু সমস্যা উত্থাপিত হয়েছিল এবং পরে ওই সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
কাদিরভের ছেলে গত মাসে কোরআন পোড়ানোর অভিযোগে অ্যাডাম নিকিতা ঝুরাভেল নামে একজন জাতিগত রাশিয়ান বন্দিকে লাথি ও ঘুষি মেরেছিল।
যদিও পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় ওই ঘটনা উঠেছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
কাদিরভ সোমবার ওই রাশিয়ান বন্দিকে মারধরের ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন, মুসলিম ধর্ম রক্ষায় তার ছেলের ভূমিকার জন্য গর্বিত তিনি।
কথিত কোরআন পোড়ানোর ঘটনা চেচনিয়ায় ঘটেনি। তবে রাশিয়ান তদন্তকারীরা বলেছেন, তারা ঝুরাভেলকে চেচেন হেফাজতে স্থানান্তর করেছেন, কারণ সেখানকার মুসলমানরা নিজেদেরকে ওই ঘটনার শিকার হিসাবে দেখছে।
সাবেক ক্রেমলিনের বক্তৃতা লেখক এবং বর্তমানে পুতিনের কঠোর সমালোচক আব্বাস গ্যালিয়ামভ বলেছেন, ‘ওই মারধরের ঘটনায় পুতিনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা যায় যে, তিনি একজন জাতিগত রাশিয়ানকে হত্যা করার জন্য চেচেনদের হাতে তুলে দিয়েছেন।’
এদিকে, চলতি মাসে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, ৪৬ বছর বয়সি কাদিরভ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন।
কাদিরভ ক্ষমতা হস্তান্তর করার বিষয়ে বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে ভেবেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তিন কিশোর ছেলের প্রোফাইল উত্থাপনও করেছেন, যাদের মধ্যে বড় ছেলেটি গত মার্চ মাসে ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে ছবি তুলেছিল।
অন্যদিকে, চেচনিয়ায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা মস্কোর জন্য অত্যাবশ্যক। কারণ, সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথক না হওয়ার জন্য দুটি নৃশংস এবং ব্যয়বহুল যুদ্ধ করেছে তারা।