পশ্চিমা অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা শিল্পকে প্রসারিত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, জেলেনস্কির ওই পরিকল্পনার লক্ষ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার পাল্টা আক্রমণের জন্য অস্ত্রের সরবরাহ বাড়ানো।
ইন্টারন্যাশনাল ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলেনস্কি বলেন, তিনি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা খাতকে একটি ‘বড় সামরিক কেন্দ্র ’ হিসাবে গড়ে তুলতে চান, যেখানে সামরিক সরঞ্জাম এবং অস্ত্র তৈরি এবং মেরামত করা যেতে পারে।
তিনি ২৫০টিরও বেশি পশ্চিমা অস্ত্র নির্মাতাদের প্রতিনিধিত্বকারী নির্বাহীদের বলেছেন, ‘ইউক্রেন প্রতিরক্ষা ম্যারাথনের এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে, যখন এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পিছু না হটে এগিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ফ্রন্টলাইন থেকে প্রতিদিন ইতিবাচক ফলাফল প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং আমাদের সেনাদের ব্যবহৃত উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর প্রতিটির স্থানীয়করণে আগ্রহী, যা আজ ইউক্রেনকে ফ্রন্টলাইনে সেরা ফলাফল দিয়েছে।’
জেলেনস্কি বলেন, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ডি-মাইনিং তার অগ্রাধিকার ছিল। ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং আর্টিলারি গোলাবারুদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোরও লক্ষ্য রাখে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ইউক্রেনের অস্ত্র নির্মাতারা যৌথ উৎপাদন, প্রযুক্তি বিনিময়, ড্রোন বা সাঁজোয়া যান এবং গোলাবারুদ তৈরির জন্য উপাদান সরবরাহের জন্য বিদেশী অংশীদারদের সঙ্গে প্রায় ২০টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ‘শুধুমাত্র বীরত্ব ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারে না। ইউক্রেনের সক্ষমতা, উচ্চ গুণমান দ্রুত প্রয়োজন। তাই কিয়েভের হাতে সামরিক শিল্প ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।’
প্রসঙ্গত, রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরুর পর জুনের শুরুতে কিয়েভ তার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।
ইউক্রেন গত বছরের নভেম্বরে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন পুনরুদ্ধার করে এবং রাশিয়ার দখলকৃত অন্যান্য অঞ্চলগুলোও পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
কিয়েভ বিভিন্ন দিকে অগ্রসর হওয়ার খবর জানিয়েছে এবং এক ডজনেরও বেশি গ্রাম মুক্ত করেছে। কিন্তু, মস্কো এখনও ইউক্রেনের প্রায় ১৮ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
ইউক্রেনের মিত্ররা মস্কোর বাহিনীকে পিছনে ঠেলে দিতে সাহায্য করার জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়েছে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা দেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশকে অর্থনীতির একটি সম্ভাব্য জায়গা হিসাবে দেখছেন।
জার্মানির রাইনমেটাল এবং যুক্তরাজ্যের বিএই সিস্টেমসহ বেশ কয়েকটি নেতৃস্থানীয় পশ্চিমা অস্ত্র নির্মাতা ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের অস্ত্র নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চেকিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন এবং তুরস্কের অস্ত্র উৎপাদনকারীদের সঙ্গে একটি পৃথক বৈঠকে বলেছেন, ‘এটি একটি পারস্পরিক উপকারী অংশীদারিত্ব হবে। আমি মনে করি এটি একটি বৃহৎ সামরিক চক্র তৈরি করার জন্য একটি ভাল সময় এবং ভালো জায়গা।’
সম্প্রতি নিযুক্ত ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বলেছেন, কিভকে তার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনে ইউক্রেনে প্রয়োজনীয় সকল সামরিক পরিষেবা এবং পণ্য উত্পাদন করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বমানের সামরিক পণ্য বিকাশ করা।’