রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) বলেছেন, হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের প্রত্যাশিত স্থল হামলা অগ্রহণযোগ্য। কারণ, ওই অভিযান অনেক বেসামরিক হতাহতের দিকে পরিচালিত করবে।
ভ্লাদিমির পুতিন টেলিভিশনে এক মন্তব্যে বলেছেন, ‘আবাসিক এলাকায় ভারী যুধাস্ত্রের ব্যবহার একটি জটিল বিষয়, যার গুরুতর পরিণতিতে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য হবে।’
এনডিটিভি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ‘এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রক্তপাত বন্ধ করা। তার দেশ সকল গঠনমূলক অংশীদারদের সঙ্গে এ বিষয়ে সমন্বয় করতে প্রস্তুত।’
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর শত শত হামাস বন্দুকধারী গাজা উপত্যাকার চারপাশে সীমান্ত বাধা ভেঙ্গে ইসরায়েলে প্রবেশ করে ১,২০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলিকে হত্যা করে এবং প্রায় ১৫০ জন ইসরায়েলি, বিদেশী এবং দ্বৈত নাগরিককে জিম্মি করে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, হাজার হাজার অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে গাজায় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে প্রতিশোধ নিয়েছে ইসরায়েল।
রাশিয়া এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষের সহিংসতার নিন্দা করেছে এবং সংঘাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করার দিকে মনোনিবেশ করেছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন শুক্রবার বলেছেন, ‘সেখানে একটি বড় মাপের ট্র্যাজেডি ঘটেছে। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থ নীতির ফল।’
উল্লেখ্য, হামাস ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে কয়েকদিনের যুদ্ধে ইসরায়েল ও গাজা উপত্যকায় নিহত বেসামরিক মানুষের সংখ্যা বিপর্যয়করভাবে বড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পুতিন।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের নীতির দিকেও লক্ষ্য রেখেছিলেন জানিয়ে পুতিন বলেন, ফিলিস্তিনিদের চাহিদা বিবেচনায় না নিয়ে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে বলেছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে ফোন আলাপে ইসরায়েল ও গাজায় নিহত বেসামরিক নাগরিকদের জন্য পুতিন উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত ও এ অঞ্চলে তীব্রভাবে খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে ক্রেমলিনে নেতাদের আলোচনা হয়।
ক্রেমলিন জানায়, অবিলম্বে সংঘাতময় অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনা প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন দুই নেতা। আলোচনায় এরদোগান বলেন, বেসামরিক স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা দুঃখজনক এবং তুরস্ক এই ধরনের কাজকে স্বাগত জানায় না।
এর আগে মঙ্গলবার, একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনকে প্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেন পুতিন। এই অঞ্চলে সহিংসতার জন্য মার্কিন নীতিকে দায়ী করেন তিনি।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-সুদানির সাথে বৈঠকে পুতিন বলেন, আমি মনে করি অনেক মানুষ আমার সাথে এক মত হবেন যে, এ যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ব্যর্থতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওয়াশিংটন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে একচেটিয়া করার চেষ্টা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য সমঝোতার কথা ভাবে না। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তাকে যুক্তরাষ্ট্র উপেক্ষা করছে।
তবে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকা কি হবে তা উল্লেখ করেননি পুতিন।
পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, ক্রেমলিন ইসরায়েল এবং গাজার উভয় পক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছে। সংঘাত সমাধানে কাজ করবে ক্রেমলিন।