জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম একটি সমস্যা। হাজার বছর ধরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির ছিল। তবে শিল্পায়ন ও বনায়ন ধ্বংসের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফের যে বিপুল পরিমাণ স্তুপ ছিল তা ক্রমশ গলতে শুরু করেছে। এই শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত গলতে থাকবে ওই বরফের স্তুপ। এর ফলে সমুদ্রে পানির উচ্চতা আরও বাড়বে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, অ্যান্টার্কটিকায় বরফের শীটে যে পরিমাণ বরফ রয়েছে যা সম্পূর্ণরূপে গলে গেলে বিশ্ব সমুদ্রের স্তর প্রায় ৫৮ মিটার (১৯০ ফুট) বৃদ্ধি পাবে।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের একটি দল দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাঁই নিয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে সমুদ্র গবেষক কেইটলিন নটেন গবেষণাপত্রে লিখেছেন, আমাদের গবেষণা একটি প্রশ্নকে সামনে রেখে এগিয়েছে। বরফ গলাকে কি কোনোভাবে আটকানো যায়? আদৌ কি তা সম্ভব?
তিনি জানিয়েছেন, তাদের গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তা খুব সুখকর নয়। পৃথিবীর সার্বিক তাপমাত্রা ইতোমধ্যেই যতটা বেড়েছে, তাতে আর চেষ্টা করেও বরফের স্তুপ গলা বন্ধ করা সম্ভব নয়।
তাদের গবেষণা বলছে, পুরো বরফ গলতে হয়তো একটা গোটা শতাব্দী লেগে যাবে, যার জেরে সমুদ্রে পানির স্তর অন্তত ৬ ফুট বেড়ে যাবে। তবে আগামী কয়েক দশকে বরফ গলার পরিমাণ ক্রমশ বাড়বে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ ক্রমশ ফুলতে শুরু করবে। যার ফলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই পুরো বিশ্ব সংকটের মুখে পড়বে।
ন্যাচার ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালে প্রকাশিত সর্বশেষ গবেষণা অনুসারে , গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের বিভিন্ন স্তরের প্রতিক্রিয়ায় কীভাবে সমুদ্রের উষ্ণতা অ্যান্টার্কটিক বরফের স্তুপকে প্রভাবিত করবে তা সরাসরি অনুকরণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর সময় এই গ্যাসগুলো উৎপন্ন হয়।
এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার উপকূলে আমুন্ডসেন সাগর এই শতাব্দীতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় তিনগুণ দ্রুত উষ্ণ হবে। এর ফলে বরফের স্তুপগুলো আরও দ্রুত গলে যাওয়ার দিকে অগ্রসর হবে। পৃথিবীর এই উষ্ণায়নকে ধীরগতি করার জন্য শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে গবেষণায়।
গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের মাধ্যমে বরফের ক্ষতি কমানোর প্রতি গবেষকরা জোর দিয়েছেন। তারা বলেছেন এখনও অ্যান্টার্কটিকার বরফের বাকী অংশ সংরক্ষণ করা সম্ভব। এজন্য আমাদের অতীতের নিষ্ক্রিয়তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং এখন থেকেই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো শুরু করতে হবে।