ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ মঙ্গলবার (২৪ ) ইসরায়েলে এক সংহতি সফরে বলেছেন, গাজায় হামাসের হাতে জিম্মিদের বাঁচানো অবশ্যই সামরিক অভিযানের ‘প্রথম উদ্দেশ্য’ হতে হবে। সেই সঙ্গে সংঘাত ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, মাখোঁর এই সফর গত ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হামলার পর ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা সমর্থনের পাল্লাকে ভারী করেছে। কিন্তু, গাজায় বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের মধ্যে মাখোঁর কার্যালয় বলেছে, তেল-আবিবকে মানবিক যুদ্ধবিরতি ডাকতে হবে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাকের সঙ্গে দেখা করার পর মাখোঁ বলেন, ‘আজ আমাদের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত কোনও পার্থক্য করা ছাড়াই সকল জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া। কারণ, শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক, বৃদ্ধ, বেসামরিক এবং সেনাদের জীবন নিয়ে খেলা করা একটি জঘন্য অপরাধ।’
প্রসঙ্গত, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলায় ৩০ জন ফরাসি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। মাখোঁ বলেন, ৯ জন ফরাসি নিখোঁজ রয়েছে এবং হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ২২০ জনের মধ্যে অন্তত একজন ফরাসি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অন্যদিকে, মিশর-কাতারের মধ্যস্থতায় আরও দুই বন্দী নারীকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্রের বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জারিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবেদা বলেন, ওই দুই বন্দীকে দুর্বল স্বাস্থ্যের জন্য মানবিক কারণে মুক্তি দেওয়া হয়।
আইসিআরসি ৮৫ বছর বয়সি ইয়োচেভেদ লিফশিটজ ও ৭৯ বছর বয়সি নুরিট কুপারের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানায়, ‘আমরা আশা করি তারা শীঘ্রই তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে ফিরে আসবে।’
গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার সময় হামাস ইসরায়েলি এবং দ্বৈত নাগরিকসহ ২০০ জনেরও বেশি লোককে জিম্মি করে। এ সময় ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির হামলায় ১৪,০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় আটক সব জিম্মির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। মানবাধিকার গোষ্ঠী, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্দিদের পরিবারও তাদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে।
৭ অক্টোবরের হামলার পর প্রথম জিম্মি মুক্তির ঘটনা ঘটে গত শুক্রবার (২০ অক্টোবর)। কাতারের মধ্যস্থতায় মার্কিন নাগরিক দুই নারী জুডিথ রানান এবং তার মেয়ে নাটালিকে মুক্তি দেয়।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, উভয় পক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন যোগাযোগের পর তাদের মুক্তি এসেছে।
আবু ওবেদা এর আগে বলেন, হামাস গত শুক্রবার জুডিথ এবং নাটালির পাশাপাশি আরও দুই বন্দিকে মুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে।
ইসরায়েল সেই দাবি অস্বীকার করে এটাকে মানুষিক প্রচার বলে অভিহিত করে। হামাস তার ভাবমূর্তি উন্নত করতে এ ধরণের কথা বলছে।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী স্থল আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অপহৃত এবং বন্দীদের পরিবারগুলো দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। তাদের কেউ কেউ ইসরায়েলি সরকারকে জিম্মি মুক্ত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে আরও সময় দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র স্থল হামলা বিলম্বিত করার জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে।