উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো অভিশপ্ত ঋণ সংকট পরিস্থিতি। এই ধরনের দেশগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতির বিস্তার ঘটানোর একটি বড় প্রবণতা রয়েছে। এজন্য ঋণ সহায়তা পাওয়ার জন্য কোনো যাচাই বাছাই না করেই দেশগুলো ‘হোয়াইট এলিফেন্ট’ প্রজেক্ট গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে ঋণের পাহাড় নিয়ে বিপাকে পড়ে।
নিম্ন মধ্যম ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা পাওয়া যেখানে কঠিন ও শর্ত সাপেক্ষ, সেখানে দ্রুতসময়ে ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে চীন। বর্তমানে সেই ঋণের ফাঁদে পা দেওয়া কোনো দেশেই অর্থনৈতিক শান্তি নেই।
জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৫৪ টি উন্নয়নশীল দেশ বর্তমানে গুরুতর ঋণ সমস্যায় জর্জরিত। এসব দেশের মধ্যে ঘানা, শ্রীলঙ্কা ও জাম্বিয়া অন্যতম।
বৈশ্বিক ঋণ সংকটের বিষয়টি শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যই নয়, উন্নত দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জন্যও অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
ঘানা, শ্রীলঙ্কা এবং জাম্বিয়ার ঋণ সংকট পরিস্থিতির কারণ কী?
শ্রীলঙ্কার সরকার ২০২২ সালের এপ্রিলে দেশটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করে। তখন দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থনৈতিক কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি সম্মত পুনর্গঠন পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আন্তর্জাতিক সকল ঋণ পরিশোধ স্থগিত করে।
এর আগে আফ্রিকান দেশ ঘানা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ঋণ খেলাপি হয় এবং নিজেকে দেওলিয়া ঘোষণা করে। অন্যদিকে জাম্বিয়া ২০২০ সালের জুনে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় এবং চরম আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়।
দেশগুলোর ঋণ সংকটের সাধারণ ক্ষেত্র হলো অব্যবস্থাপনা সংকট। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে অপর্যাপ্ত কর আয়, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ফাঁদ ও চীনের দেওয়া দ্বিপক্ষীয় ঋণ পরিশোধের চ্যালেঞ্জ। এসব কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামো মারাত্মকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তবে নিজস্ব কিছু সমস্যার কারণেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতি পিছিয়ে পড়ে।
যেমন, শ্রীলঙ্কা বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ছাপানোর নীতি গ্রহণ করে। এর পাশাপাশি কৃষি খাতের অগ্রগতিকে অনুৎসাহিত করে অর্থনীতির নতুন নীতি প্রয়োগ করে। নীতিগত ত্রুটি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা শ্রীলঙ্কায় বহুমুখী বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে শুরু করে।
অসময়ে কর কমানো, জৈব কৃষি গ্রহণের দ্রুত প্রচেষ্টা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার সময়ও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ না হওয়ার রেকর্ড বজায় রাখার প্রচেষ্টা, বিনিময় হারের বিলম্বিত সমন্বয় এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় আমলে না নেওয়া দেশটির অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়। এরপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়া, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে ক্রমান্বয়ে।
ঘানার সরকার বিপুল ভর্তুকি দিয়ে অবাস্তব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়ে অর্থনীতির ভিত্তিই যেন উপড়ে ফেলে। কর কমানো ও তহবিলের অপব্যবহার ঘানার অর্থনৈতিক পতনকে ত্বরান্বিত করে। দেশটি যেসব খাতে কর সংস্কার বা কর হ্রাস করেছে সেসব খাতের মধ্যে রয়েছে- আবাসন কর, আর্থিক পরিষেবা কর, আমদানি শুল্কের ভ্যাট, স্বাস্থ্য সেবার কর, জাতীয় বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের শুল্ক, জন বিদ্যুতায়ন খাতের শুল্ক এবং বিশেষ পেট্রোলিয়াম পণ্যের কর।
অন্যদিকে, জাম্বিয়া নির্দিষ্ট কিছু খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, নতুন করে ভাতা পুনঃস্থাপন ও জলবায়ুর নাজুক প্রভাব মোকাবিলা করতে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে যায়। জাম্বিয়ার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হলেও আর্থিক ভারসাম্যহীনতা দেশটির অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান ঋণের চাপ তৈরি করেছে।
সংকটের কারণ ভিন্ন হলেও তিনটি দেশেরই পরিণতি ছিল এক। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ এই দেশগুলো রাষ্ট্রীয় ব্যয়ই যথাযথভাবে নির্বাহ করতে পারছিলো না। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্যেও বেসরকারি খাতের ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে দেশগুলোকে। ফলে অর্থনৈতিক সংকট ও ঋণ পরিস্থিতি যেন দিনিদিন শুধু ঘনীভূত-ই হচ্ছিল, যার পরিণতি ঋণ খেলাপি ও দেওলিয়াবরণ।
ঋণ সংকট সৃষ্টি নাকি সহায়তা- এক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা কী?
বৈশ্বিক ঋণ সংকট সৃষ্টির কারণ হিসেবে চীনের নাম চর্চিত হয়ে আসছে বহু আগ থেকে। বেশকিছু দেশের আর্থিক সংকটের কারণ খতিয়ে দেখলে চীনকে পাওয়া যায় একেবারে মূলে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা এই চীন মূলত ঋণ সহায়তার নামে ঋণের সাগরেই ডুবিয়ে দেয় উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলোকে। এরই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে ঘানা, শ্রীলঙ্কা ও জাম্বিয়ার ঋণ সংকটের ক্ষেত্রেও।
জাম্বিয়ার বৈদেশিক ঋণের ১৭ দশমিক ৬ শতাংশই চীনের। ঘানার বৈদেশিক ঋণেরও ৩ শতাংশ চীনের। ঘানায় চীনের বিনিয়োগ মূলত দেশটির কোকোয়া, বক্সাইট ও জ্বালানি তেল খাতে। এই দুই দেশে চীনের পরিমাণ সামান্য হলেও শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের প্রায় অর্ধেকই চীনের। দেশটির মোট ঋণের ৪৫ শতাংশই চীনের। আর চীন এককভাবে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ঋণ দাতা হওয়ায় আইএমএফের সঙ্গে ঋণ চুক্তি নিয়ে বেশ সমস্যা দেখা দেয়।
চীনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রকল্প হলো বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের আওতায় দেশটি বিভিন্ন নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়েছে। এই ঋণ চীন সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। দেশটিকে যেন অর্থনৈতিক কোনো চাপে পড়তে না হয় তাই ঋণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে খুবই সতর্ক চীন।
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে চীনের থাবা
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সবচেয়ে আলোচিত খবর ছিল দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট। দেশটিতে মানুষের খাবার-জ্বালানির জন্য হাহাকার, মৌলিক অধিকার প্রাপ্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ, প্রেসিডেন্টের পালিয়ে যাওয়া, আইএমএফের কাছে বেইল আউট প্রার্থনা, রিজার্ভ বিলীন হয়ে যাওয়ার মতো চরম সংকট পরিস্থিতি দেখেছে পুরো বিশ্ব।
শ্রীলঙ্কার কাছে বিপুল পরিমাণ ঋণ থাকা সত্ত্বেও চীন দেশটিকে আরও ৪২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে। চলতি বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমা সিংহের চীন সফরের সময় বিষয়টি নির্ধারিত হয়।
আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তির কঠিন শর্তের বিপরীতে চীন যেন সহজ সমাধান। কারণ চীনা ঋণের সহায়তায় শ্রীলঙ্কা অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধে সক্ষম হবে বলে ধারণা করছে। এরই মধ্যে দেশটির অর্থমন্ত্রী শেহান সেমাসিংহে বলেছেন, ঋণের বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইএমএফের সঙ্গে কর্মকর্তা লেভেলে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে।
বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির করা এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১০ সালে চালু হওয়া দেশটির হাম্বানটোটা বন্দর থেকে শ্রীলঙ্কা কাঙ্ক্ষিত লাভ করতে না পারায় ও চীনের ঋণ শোধ করতে অক্ষম হওয়ায় ২০১৭ সালে ১১০ কোটি ডলারের বিনিময়ে বন্দরটির নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে তুলে দেয় শ্রীলঙ্কা।
কৌশলী চীন খুব ভালো করেই জানতো, এ বন্দর থেকে শ্রীলঙ্কা সুবিধাজনক ফল পাবে না। কিন্তু এ বন্দর ব্যবহার করে চীন তাদের কাঙ্ক্ষিত সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে। চায়না মার্চেন্টস পোর্ট হোল্ডিংসের নেতৃত্বাধীন একটি ভেঞ্চার কোম্পানি শ্রীলঙ্কাকে এক রকম বাধ্য করে দেশটির বন্দরের কার্যক্রম ও লভ্যাংশ চীনের হাতে তুলে দিতে।
শুধু হাম্বানটোটা না, বন্দর সংলগ্ন ১৫ হাজার একর জমি চলে যায় চীনের অধীনে। এসব জমি থেকে হাজার হাজার গ্রামবাসীকে উচ্ছেদ করে তৈরি করা হয় শিল্পনগরী, যার আসল সুবিধাভোগী ছিল চীন। চীনের এমন কার্যকলাপে সহজেই বোঝা যায়, যুদ্ধ-সংঘর্ষ ছাড়াই শ্রীলঙ্কার সার্বভৌমত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে চীন।
এছাড়াও কলম্বো পোর্ট সিটি ও রাজাপাকসে বিমানবন্দরের মতো অপ্রয়োজনীয় প্রজেক্টে শ্রীলঙ্কাকে উৎসাহিত করার পেছনে চীনকে দায়ী করা হয়।
চীনা ঋণের জাঁতাকলে আফ্রিকান ও এশিয়ার দেশ
চীনা ঋণের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হলো আফ্রিকার দেশগুলো। বিশেষ করে জিবুতি, দক্ষিণ আফ্রিকা, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, কেনিয়া, ক্যামেরুন, জাম্বিয়া, মিশর, নাইজেরিয়া ও ঘানার মতো দেশগুলো চীনা ঋণের জাঁতাকলে পিষ্ট।
সদ্য আলোর মুখ দেখা জাম্বিয়ার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক অবস্থান নিয়েছে চীন। যেমন, আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের ৪০০ কোটি ডলার ঋণের সুদহার কমাতে সম্মত হয়েছে চীন। নতুন নির্ধারিত সুদহার হলো মাত্র ১ শতাংশ। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২০৩৭ সাল পর্যন্ত।
ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে চীনের এমন উদার মনোভাব মুগ্ধ করেছে ঘানাকেও। দেশটি আশা করেছিল চীন তাদেরও আইএমএফের শর্ত পূরণে তাদের সহায়তা করবে। গত এক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটে পড়া ঘানার প্রায় ৫৫ শতাংশ ঋণই ছিল বৈদেশিক, চীন সেখানে অন্যতম দাতা রাষ্ট্র।
আরেক আফ্রিকান দেশ জিবুতির প্রায় ৭০ শতাংশ ঋণই চীনের অন্তর্ভুক্ত। জিবুতিকে ঋণ দেয়ার পেছনে চীনের সবচেয়ে বড় স্বার্থ ছিল ভারত মহাসাগরে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করা। জিবুতির মতো বেশিরভাগ আফ্রিকার দেশে সমুদ্রবন্দর তৈরিতে আর্থিক সহায়তায় চীনের আগ্রহের প্রধান কারণ অর্থনৈতিক ও সামরিক উভয়ই। ঋণ দেয়ার সুবাদে দীর্ঘ সময়ের জন্য আফ্রিকার দেশগুলোর বন্দরগুলোতে ইজারা নিতে পারে চীন।
মূলত ২০১০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা ছাড়া বাকি সব মহাদেশেই চীনা ঋণের বিস্তার ঘটেছে। নিম্ন মধ্যম ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও জ্বালানি খাতে মূলত ঋণ দেয়ার লক্ষ্য থাকে চীনের।
বড় অবকাঠামোর পাশাপাশি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রায় ২৪টি রাষ্ট্রপতি ভবন, ১৮৬টি সংবেদনশীল সরকারি ভবন, ২৬টি সংসদ ও সংসদীয় অফিস, ৩২টি সামরিক অফিস এবং ১৯টি পররাষ্ট্রবিষয়ক ভবন নির্মাণ ও সংস্কার করেছে চীন। দেনার দায়ে পর্যদুস্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করার লক্ষ্যেই চীন এই ঋণ সহায়তার খেলায় মেতেছে বলে দাবি করে আসছে পশ্চিমারা।
এই প্রসঙ্গে পশ্চিমা অর্থনীতিবিদ চার্লস রবার্টসন বলেন, আফ্রিকার এ দেশগুলোতে চীন তাদের ঋণ কার্যক্রম শুরু করার আগে ঋণ সংকটের ঝুঁকি ছিল ২৫ শতাংশ, যা চীনের ঋণের ফাঁদের পড়ে বেড়ে হয়েছে ৬০ শতাংশ।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার পর চীনের অন্যতম শিকার পাকিস্তান। আইএমএফের হিসাবমতে, বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা দেশ চীন। দেশটির ৩০ শতাংশ ঋণই চীন থেকে এসেছে। এরইমধ্যে আবারও ঋণের জন্য চীনের দ্বারস্থ হয়েছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানকে মূলত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রতিরক্ষা খাতে লাগামহীন বাজেট বৃদ্ধি, জঙ্গিদের অপতৎপরতা থেকে শুরু করে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ঋণ নেয়ার ফল ভোগ করতে হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কা, ঘানা ও জাম্বিয়ার অর্থনীতি পুনর্গঠনের গল্প
চরম অর্থনৈতিক মন্দা ও ঋণ সংকট পরিস্থিতিতে দেশ তিনটি সর্বশেষ উপায় হিসেবে দ্বারস্থ হয় দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। আইএমএফ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সংকট কাটানোর জন্য শর্তসাপেক্ষে ঋণ সহায়তা দিতে আগ্রহ দেখায়।
এ ক্ষেত্রে আইএমএফ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে শ্রীলঙ্কা ও ঘানার ক্ষেত্রে এক রকম কৌশল ও নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে জাম্বিয়ার সঙ্গে অন্যরকম কৌশল গ্রহণ করে। ঘানা ও শ্রীলঙ্কাকে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গৃহীত ঋণগুলোকে পুনর্গঠনের শর্ত দেওয়া হয়। জাম্বিয়া নিম্ন মধ্যম আয়ের হওয়ায় এমন বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পায়।
শর্তসাপেক্ষে আইএমএফ ঘানা ও শ্রীলঙ্কাকে ৩০০ কোটি ডলার এবং জাম্বিয়াকে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ সুবিধা দেয়। এর মধ্যে জাম্বিয়া বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের উচ্চ ঋণ সংবলিত দরিদ্র দেশের (এইচআইপিসি) তালিকাভুক্ত হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে।
আইএমএফের সহজ শর্তে ঋণ ও সংকট মোকাবিলায় কৌশলগত পদক্ষেপ দেশ তিনটির অর্থনীতির পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। চলমান বৈশ্বিক ঋণ সংকটের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ঋণ সংকট কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অধিকতর উন্নত কৌশল অবলম্বন প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
দ্য ডিপ্লোম্যাট