এমন একটি ভবিষ্যৎ কল্পনা করুন যেখানে আপনি হাত নেড়ে যেকোনো কেনাকাটা, মেট্রোরেলের টিকেট কাটা, অফিসে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া সবকিছুই করতে পারছেন। বিশ্বের অন্যকোথাও তা সম্ভব না হলেও চীনে তা ইতিমধ্যেই বাস্তবে ঘটিয়েছে টেনস্যান্ট কোম্পানি। টেনস্যান্ট চীনের একটি জনপ্রিয় অ্যাপ যার ব্যবহার বহুমুখী। মাত্র একটা অ্যাপেই চীনের মানুষ সব ধরনের কাজ করে থাকে।
সুপার অ্যাপ ‘উই চ্যাট’ চীনের মানুষদের কাছে একটি জনপ্রিয় ম্যাসেজিং অ্যাপ। এর মাধ্যমে অ্যামাজন, হোয়াটসঅ্যাপ, ডেলিভারি. ফেসবুক, নেটফ্লিক্স, মিউজিক, সিনেমা সবকিছুই উপভোগ করে তারা। ডিজিটাল দুনিয়ার সব প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম টেনস্যান্ট কোম্পানির এই অ্যাপ এখনও চীনের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ। বর্তমানে বিল পরিশোধে শুধু হাতের ইশারা বা স্ক্যান পদ্ধতির শুরু করেছে এই কোম্পানি।
সামাজিক নেটওয়ার্কিং থেকে মুদির অর্ডার দেওয়া, ডিজিটাল পেমেন্ট করা এখন সবই করা সম্ভব হাতের ইশারায়। চীনের জনগণ তাদের অধিকাংশ সময় এই অ্যাপেই কাটায়। এই অ্যাপ দিয়ে বিল দেওয়া, বন্ধুদের সাথে গল্প করাসহ সব প্রয়োজন মেটায় তারা। এই অ্যাপসের ব্যবহারকারী একটি সেন্সরের উপর তাদের হাত ঘুরালেই অ্যাপটি ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করতে পারে এবং সেকেন্ডের মধ্যেই অর্থপ্রদান ও বিল পরিশোধ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যায়।
টেনস্যান্ট বিশ্বের জনপ্রিয় ধনী প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড, ফেসবুক বা স্যামসাং এর চেয়েও বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক। এই প্রতিষ্ঠান গেইম, অ্যাপ তৈরি, এআইসহ বহুমুখী সেবা প্রদান করে। ১৯৯৮ সালে মা হুয়াত্যাঙ প্রতিষ্ঠা করেন এই টেনস্যান্ট কোম্পানি।
টেনস্যান্ট কোম্পানির একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ গুও রিজেন বলেন, ‘টেনসেন্ট এমন একটি কোম্পানি হতে চেয়েছে যা সবধরনের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে। এর বাইরে অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের প্রয়োজন যেন না পড়ে। আমাদের এই আস্থা আছে যে আমরা নিরাপত্তা ধরে রেখে টেনস্যান্ট এবং উই চ্যাট’ পরিচালনা করতে পারব।’
টেনস্যান্টের ওয়েইক্সিন পে ইন্ডাস্ট্রি অ্যাপ্লিকেশন ইউনিটের ভাইস জেনারেল ম্যানেজার গুও আরও বলেন, অ্যামাজনসহ অনেক পরিষেবা আমরা প্রদান করি। খুব সহজেই এই অ্যাপ ব্যবহার করে সব কাজ করতে সক্ষম হবে ব্যবহারকারী। প্রযুক্তিটি ধীরে ধীরে বাহ্যিকভাবেও চালু করা হচ্ছে। দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং প্রদেশে টেনস্যান্ট ১৫০০ টিরও বেশি সেভেন- ইলেভেন স্টোর চালু করেছে বলে জানান তিনি ।
গুও এ সম্পর্কে বলেন, পরিষেবাটি বৃহৎ পরিসরে প্রসারিত করা হবে কিনা তা বাজারের চাহিদা এবং প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করছে। টেনস্যান্ট চীনের বাইরে এর ব্যবহার সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি বলে জানান তিনি।
কনসালটেন্সি গুড ইন্টেলিজেন্সের একটি অনুমান অনুসারে এ গ্লোবাল বায়োমেট্রিক পেমেন্ট মার্কেটটি ২০২৬ সালের মধ্যেই ৩ বিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারী নিশ্চিত করতেম পারবে। এতে এর বাজার মূল্য প্রায় ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল প্রযুক্তির শিল্প অধ্যাপক এডওয়ার্ড স্যান্টো গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সতর্ক করে বলেন, এই ধরনের প্রযুক্তি ঝুঁকি বহন করে। যদিও অনেক ভোক্তা ক্রেডিট কার্ড এবং সেল ফোনের উপর তাদের নির্ভরতা হ্রাস করার উপায় হিসাবে এটি গ্রহণ করেছে, গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার উদ্বেগ রয়েই গেছে। কোনো ধরনের নজরদারি মানুষ পছন্দ করেনা বলে জানান তিনি।
সান্টো আরও বলেন, তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি হ্যাকারদের আকৃষ্ট করতে পারে। এটি সাইবার অপরাধীদের জন্য এক ধরনের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
জবাবে গুও সিএনএনকে বলেন, নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে টেনস্যান্ট। ব্যবহারকারীদের বায়োমেট্রিক ডেটা ক্লাউডে সংরক্ষণ করা হয় এবং নিরাপত্তার জন্য এনক্রিপ্ট করা হয়। তাই নিশ্চিন্ত হয়ে তারা এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারে।