‘ইসরায়েলের চোখ’র কান্না পাত্তা দেয়নি উচ্চপদস্থরা

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2024-01-23 17:43:23

৭ অক্টোবর হামাস আচমকা আক্রমণ চালায় ইসরায়েলের সীমান্তে। সেখানে কর্তব্যরত ইসরায়েলি সেনা সদস্যদের অনেকে মারা যায়। হামাসের অপারেশন আল-আকসা-ফ্লাড এর মাধ্যমেই শুরু হয় দুর্ধর্ষ ইসরায়েল-ফিলিস্তান যুদ্ধ। তবে, যথাযথ গুরুত্ব পেলে হয়তো যুদ্ধের এই ভয়াবহ রূপ দেখতে হতো না। কারণ হামলার ঘটনাটি একেবারেও আচমকা ছিল না। এমন কিছু যে হতে পারে, তার কিছুটা আভাস পেয়েছিল ‘ইসরায়েলের চোখ’।     

‘ইসরায়েল-গাজা’ সীমানায় কর্মরত তরুণী সদস্যরা সীমান্তরক্ষী হিসেবে কাজ করতো। ‘ইসরায়েলের চোখ’ নামে পরিচিত তারা। সেনা সদস্যদের একটি ইউনিট কয়েক বছর ধরে এখানে পাহাড়া দিত। সন্দেহজনক কোনো লক্ষণ নজরে এলেই উচ্চ কর্মপদস্থদের জানাতে হবে। সেই উদ্দেশ্যেই ঘাঁটিতে বসে পালাক্রমে নজরদারি করতেন তরুণীরা ।

হামাসের আক্রমণ করার কয়েক মাস আগে তারা কিছু ঘটনা লক্ষ্য করেছিলেন। সীমান্তের ওপারে কৃষকদের অদ্ভুত আচরণ তাদের নজরে আসে। সেখানে তারা অনুশীলন, অভিযান, জিম্মি করার মহড়া দিয়ে চর্চা করতো।

পাহাড়ায় থাকা নারী সেনা সদস্যদের মধ্যে একজনের ছদ্মনাম 'নোয়া'। তিনি জানান, সীমান্তের সব অদ্ভুত কার্যকলাপ দেখার পর, তারা গোয়েন্দা এবং উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাদের জানান। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ), দেশের সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু তারা অবহেলা করেছেন। বাস্তব ‘চোখ’-এর মতো শুধু দেখা ছাড়া তখন আর কিছুই করার ছিল না। তবে তারা নিশ্চিত ছিলেন, হামাস খুব বড় কোনো পরিকল্পনা করছে।    

হামলার আগে নারী সেনাদের পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপের বার্তাও সামনে এসেছে। সাবধান করার পরও ঊর্ধ্বতর কর্মকর্তারা সোচ্চার হন নি। বরং তাদের বার্তা নিয়ে রসিকতা করা হয়। অনিবার্য আক্রমণের সময় কে দায়িত্ব পালন করবে-তা নিয়ে ঠাট্টা করতে দেখা যায়।

সাধারণ জনগণ এই ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করেছিল। তাই, সামরিক বাহিনীর প্রতিক্রিয়ায় প্রশ্ন এবং ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। সময় মতো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা, সামরিক গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী কোনো রকম উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা বর্তমানে হামাসের সন্ত্রাসী হুমকি প্রতিরোধে ব্যস্ত। আক্রমণকারীদের নির্মূল করার দিকে মনোনিবেশ করছেন বলে জানায়।

এক সাবেক কমান্ডার বলেছেন, সীমান্ত থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো তারা একত্রিত করেননি। যদি করতেন, তাহলে সব সরলরেখায় সাজাতে পারতেন। এখানেই তাদের ভুল হয়েছে। হামাসের হামলায় অনেক মানুষের প্রাণ গেছে। তাদের পক্ষে এই ঘটনার সম্মুখীন করা সম্ভব হতো। অন্তত মৃতের সংখ্যা এত বেশি হতো না। হামলায় সন্তান হারিয়ে শোকার্ত নারী সদস্যদের পরিবার।

হামলার দিন সীমান্তে দায়িত্বরত ছিলেন ১৯ বছর বয়সী সাই আশরাম। পরিবারের সাথে মোবাইলে কথা বলছিলেন তখন। হঠাৎ ভেসে আসে গুলিবর্ষণের শব্দ। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির কথা জানান সাই। তিনি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন বড় কিছু ঘটতে চলেছে। সেদিন এক ডজনেরও বেশি নারী সদস্য প্রাণ হারায়। সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মিও হয় অনেকে।  

কন্যা শোকে আজও দুর্বল হয়ে আছেন সাইয়ের বাবা ডর। মেয়ের শোয়ার ঘর এখনো আগের মতোই সাজিয়ে  রেখেছেন। ড্রেসিং টেবিলের পাশে ঝুলছে গর্বের ব্যারেট। তার উপরে সামরিক পোশাকে পরা ছবি। নিজের পেশার প্রতি অনেক ভালোবাসা এবং গর্ব ছিল সাইয়ের। সেই কথা স্মরণ করে এখনো মেয়ের রুমে গিয়ে কাঁদেন ডর।

গাজা সীমান্ত থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে নাহাল ওজের ঘাঁটি। হামাসের আক্রমণের সাথে সাথে সেখানকার নারীরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিদায় জানাতে শুরু করে। নোয়া তখন ডিউটিতে ছিলেন না। বাড়িতে থেকেই বার্তাগুলো পড়েন। তাদের আশঙ্কা সত্য হয়েছে ভেবে আতঙ্কিত হচ্ছিলেন।

রনি লিফশিটজও হামলার সময় ডিউটিতে ছিলেন। কয়েক সপ্তাহ ধরেই তিনি লক্ষ্য করেন, হামাসের কর্মকাণ্ড। যোদ্ধা ভর্তি যানবাহিনী নিয়মিত টহল দিতে বের হতো। পোশাক দেখে তাদের হামাসের অভিজাত নুখবা বাহিনীর সদস্য বলে চিহ্নিত করেন রনি। সেই সময় তারা নানাদিক থেকেই নজর রাখার চেষ্টা করে। ক্যামেরা দিয়ে সরাসরি ধারণ করা দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টাও করে। হামলা যেভাবে করা হবে- তার অনুশীলন প্রতিদিন দেখতেন তারা। মডেল ট্যাঙ্ক দিয়ে বেড়া উড়িয়ে দখল করার চর্চা করতেন তারা।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এ সম্পর্কিত আরও খবর