পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে যাচ্ছে কয়েক হাজার কিলোগ্রাম ওজনের বিশাল নিয়ন্ত্রণহীন অকেজো একটি স্যাটেলাইট।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ১৪ মিনিট নাগাদ স্যাটেলাইটটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে স্যাটেলাইটটি সফলভাবে নিরাপদে অবতরণের কোনো সুযোগ নেই। আর তাই পৃথিবীর কোথায় স্যাটেলাইটটি আছড়ে পড়বে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য জানা যাচ্ছে না। এবং এটি কাউকে আঘাত করতেও পারে বলে সাবধান করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর সৌর ক্রিয়াকলাপের প্রভাবে এর বড় একটি অংশ সেখানেই পুড়ে বা জ্বলে যাবে এবং অবশিষ্ট কয়েকটি টুকরো পৃথিবীতে পড়তে পারে।
মার্কিন সংবামাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, স্পেস এজেন্সিটির স্পেস ডেব্রিস অফিস ও একটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক যৌথভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও স্যাটেলাইটটি ট্র্যাকিং করছে।
স্পেস এজেন্সিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, মহাকাশযানটির পুনরায় বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করাটা 'স্বাভাবিক' এবং এটি পরিচালনার সম্ভাবনা না থাকায় সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয় যে এটি বায়ুমণ্ডলের ঠিক কোথায় প্রবেশ করবে ও ঠিক কখন জ্বলে যেতে শুরু করবে। এছাড়াও সৌর কার্যকলাপের বিষয়ে আগে থেকে কোনো কিছু অনুমান করতে না পারাটাও এর একটি কারণ।
সৌর কার্যকলাপ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ঘনত্বের পরিবর্তন এবং স্যাটেলাইটের ওপর বায়ুমণ্ডলের আকর্ষণ বলকে প্রভাবিত করতে পারে। সূর্য যেহেতু তার ১১ বছরের চক্রের শীর্ষের খুব কাছাকাছি রয়েছে, তাই সৌ ক্রিয়াকলাপও বাড়ছে। চলতি বছরের শেষের দিকে সৌর ক্রিয়াকলাপ সর্বাধিক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সৌরচক্র মূলত সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রের চক্রাকার পরিবর্তনের নাম। চক্রাকার এই পরিবর্তনের জন্য সময় লাগে গড়ে ১১ বছরের মতো। এই চক্র চলাকালীন সূর্যের মেরু পরিবর্তিত হতে থাকে। অর্থাৎ সূর্যের দক্ষিণ ও উত্তর মেরু একে অন্যের সঙ্গে জায়গা বদল করে।
স্পেস এজেন্সির তথ্যমতে, জ্বালানি ছাড়াই ইআরএস-২ স্যাটেলাইটের আনুমানিক ভর ৫ হাজার ৫৭ পাউন্ড (দুই হাজার ২৯৪ কিলোগ্রাম)। পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) ওপরে স্যাটেলাইটটি ভেঙে যাবে এবং এর বেশিরভাগ অংশ বায়ুমণ্ডলে পুড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এজেন্সিটি আরও জানায়, স্যাটেলাইটটির কয়েকটি টুকরো পৃথিবীতেও পড়তে পারে। তবে ভয়ের কারণ নেই। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা বা ক্ষতিকর কোনো বস্তু নেই। আর সম্ভবত টুকরোগুলো সমুদ্রে পড়বে।
জানা যায়, পৃথিবীর ভূমি, মহাসাগর ও মেরু অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহের জন্য ১৯৯৫ সালে ইআরএস-২ নামের স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হয়। প্রায় ৩০ বছর ধরে আমাদের গ্রহের ওপরে ঘুরে বেড়িয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির স্যাটেলাইটটি।