ক্যাবেজ এন্ড কনডম নামেই ডাকার অনুরোধ

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাউথ-ইস্ট এশিয়া, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড | 2024-03-01 04:44:20

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি পরিচিত জায়গার নাম সুকুমভিত। বাংলাদেশিরাও সবচেয়ে বেশি এই এলাকায় থাকেন। আর সুকুমভিত এলাকাতেই এখন সবচেয়ে আলোচিত রেস্টুরেন্ট 'ক্যাবেজ এন্ড কনডম'। ভিন্ন দেশ থেকেও মানুষ এখানে এসে এক বেলা খেয়ে যান। এই রেস্টুরেন্টে খাওয়া মানে শুধুই পেট ভরানো নয়, বরং জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপদ যৌন মিলন নিয়ে সচেতনতা তৈরির বৈশ্বিক উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করা।

থাইল্যান্ডে 'গলি'কে বলা হয় 'সই'। সুকুমভিত সই-১২ তে ঢুকে ২০০ মিটার হাঁটলেই চোখে পড়বে ক্যাবেজ এন্ড কনডম রেস্টুরেন্ট। এখানে রেস্টুরেন্টের প্রতিটি সাজসজ্জায় রয়েছে কনডমের ব্যবহার। কনডম দিয়েই তৈরি করা হয়েছে নানা ভাস্কর্য। রয়েছে মিস্টার এবং মিসেস কনডমের ভাস্কর্যের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ।

এর আগে অনেকের কাছে নাম শুনলেও যাওয়া হয়নি। তবে গত সোমবার দেশ থেকে আসা বাংলাদেশি বন্ধুর পরিবারের সঙ্গে আমরাও গেলাম রেস্টুরেন্টে। ভেতরে এক পার্শ্বে কৃত্রিম উপায়ে ম্যানগ্রোভ পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। গাছ থেকে সবসময় পানি ঝড়ে পড়ছে একটা বৃহৎকার অ্যাকুরিয়ামে, সেখানে খেলা করছে মাছেরা।

এখানে যে বাতিগুলো ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানে রয়েছে কনডমের আকৃতির নকশা। তবে খুব সাধারণ প্রশ্ন, কেন এই নামকরণ?

ক্যাবেজ এন্ড কনডম

কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, থাইল্যান্ডের বেসরকারি সংস্থা পপুলেশন এন্ড কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (পিডিএ) তাদের একটি প্রকল্পের আওতায় এই রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করেন। থাইল্যান্ডের পরিবার ও সমাজেও এখনো অনেক ক্ষেত্রে 'যৌনতা নিয়ে কথা বলা বারণ', এক ধরনের ট্যাবু রয়েছে। ফলে অসচেতনতা এবং গোপনীয় ভাবার কারণে অনেক কিশোর কিশোরী নিজেদের জীবনকে বিপদে ফেলছেন। তাই নিরাপদ যৌনতা এবং পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতেই এই নাম দেওয়া হয়েছে।

আমরা সাতায় কাই (মুরগির মাংসের সাতায়), সাতায় গুং (চিংড়ির সাতায়), টম খা গাই (নারিকেলের দুধ দিয়ে মুরগির মাংস রান্না), সোম তাম থাই (পেপের সালাদ), প্লা কা পোং নুয়েং সে এর সঙ্গে ভাত অর্ডার করলাম। এখানে প্রায় ১০০ ধরনের খাবার রয়েছে।

প্রতি সোম ও বুধবারে ঐতিহ্যবাহী থাই নৃত্য পরিবেশন করা হয় সন্ধ্যা সাগে সাতটা এবং সাগে আটটায়। আমরাও বেশ উপভোগ করলাম আর এখানকার স্টাফরাও বেশ আন্তরিক।

খাবারের স্বাদ কেমন?

থাইল্যান্ডের খাবারে এখন আমার অন্তত স্বাদ বোঝার ক্ষমতা হয়েছে দাবি করতে পারি। সেই অনুযায়ী সৎ মতামত দিলে বলবো, খাবারের স্বাদ গড়। অনেক সুস্বাদু বলা যাবে না। তবে পরিবেশনে ভিন্নতা আর সাজসজ্জায় মৌলিকতা রয়েছে।

এখানে কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের অনুরোধ করেন, তাদের রেস্টুরেন্টের পুরো নামটি বলার জন্য। কারণ এখনো অনেকেই 'কনডম' শব্দটি বলতে সংকোচ বোধ করেন। তাই যৌনতা একটি স্বাভাবিক কার্য এবং কনডম তার অনুষঙ্গ, বিষয়টিতে সচেতন করতে যেন 'ক্যাবেজ এন্ড কনডম, নামে ডাকা হয় তার অনুরোধ করেন।

এখানে খাবারের শেষে বিল নিয়ে আসার সময় কর্মীরা কোন মিন্ট নিয়ে আসলো না। বরং ঝুড়ি ভর্তি কনডম নিয়ে আসে। সেখান থেকে যার যত ইচ্ছা নেওয়ার অনুরোধ করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর