কোমল পানীয় হৃদরোগের ঝুঁকি ২০ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে: গবেষণা

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2024-03-08 10:33:48

একটু ভারী খাবার খেলেই কোমল পানীয় পান করার অভ্যাস থাকে অনেকের। সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে, যারা কোমল পানীয় পান করেননি তাদের তুলনায় সপ্তাহে দুই লিটার বা তার বেশি কোমল পানীয় পান করা মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি ২০ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে।

গবেষণায় বলা হয়, মানুষের শরীরে হার্ট বা হৃদ্‌যন্ত্র হল একটি ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল পাম্প। এই অঙ্গের উপরের দু’টি চেম্বারকে বলে ‘অ্যাট্রিয়া’ এবং নিচের দু’টিকে ‘ভেনট্রিকল’। হার্টের উপরের ডান দিকের অ্যাট্রিয়ার সাইনোয়াট্রিয়াল নোড থেকে যে ইলেকট্রিক ডিসচার্জ হয়, তার ফলে যন্ত্রটির উপরের অ্যাট্রিয়াগুলি সংকুচিত হয় এবং রক্ত উপরের চেম্বার থেকে নিচের ভেনট্রিকল-এ পৌঁছায়। এই ইলেকট্রিক সিগন্যালই ভেনট্রিকলে সঞ্চারিত হলে ওই চেম্বারগুলিও সংকুচিত হয়। এই ক্রিয়ার ফলে রক্ত শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। হার্টের সংকোচন-প্রসারণের সময় ও ছন্দ হার্টের ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হয়। সাধারণত মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার এই ইলেকট্রিকাল ডিসচার্জ হয়ে থাকে। সাধারণত, হার্ট রেট বা হৃদ্‌স্পন্দন ৭২-এর আশপাশে থাকে। কিন্তু খেলাধুলা বা অন্যান্য কাজের সময়ে এটা বেড়ে যায়। হৃদ্‌স্পন্দনের এই সাধারণ ছন্দ যখন ব্যাহত হয়ে হার্টের উপরের চেম্বারগুলি (অ্যাট্রিয়া) এক সময় তীব্র এবং অসংলগ্ন গতিতে সংকুচিত হয় আর নিচের চেম্বারগুলি (ভেনট্রিকল) অন্য সময়ে সংকুচিত হয়, তখন এই পরিস্থিতিকে বলা হয় অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন (এফিব)। বেশি চিনিযুক্ত পানীয় পান করলে এই অবস্থার ঝুঁকি ১০ শতাংশ বেড়ে যায়।

পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পুষ্টি বিজ্ঞানের প্রফেসর পেনি ক্রিস-ইথারটন বলেন, এটিই প্রথম গবেষণা- যা কম-ক্যালোরির মিষ্টিযুক্ত পানীয় এবং অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের ঝুঁকির মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে।

২০১৭ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ইউরোপীয়দের এই অবস্থার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রায় ২২ শতাংশ ঝুঁকি রয়েছে।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন নিউট্রিশন কমিটির সদস্য ক্রিস-ইথারটন বলেন, গবেষণার ফলাফল নিশ্চিত হতে আমাদের কোমল পানীয়র ওপর আরও গবেষণার প্রয়োজন।


অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে

বর্তমানে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্রোকের প্রধান কারণ। এছাড়াও, ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানায়, হৃদরোগের অন্যান্য অন্তর্নিহিত কারণগুলোর চেয়ে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন বেশি গুরুতর।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক, সান ফ্রান্সিসকো স্কুল অফ মেডিসিন এবং ইউসিএসএফ স্বাস্থ্যের গবেষণার জন্য কার্ডিওলজির সহযোগী প্রধান ড. গ্রেগরি মার্কাস পূর্বের একটি সাক্ষাৎকারে সিএনএনকে বলেছিলেন, অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন রক্ত ​​​​জমাট বাঁধা, হার্ট ফেইলিওর হতে পারে এবং "হৃদরোগ, ডিমেনশিয়া, কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই সমস্ত জিনিস সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি।

হার্ট রিদম সোসাইটি অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের সাথে বসবাস করছে। যার মধ্যে ৬ মিলিয়ন মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনে আক্রান্তদের অনেকেই বুকে ব্যথা, ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট এবং ক্লান্তিতে ভোগেন। কিন্তু অনেকের জন্য এটি লক্ষণহীন, একটি সম্ভাব্য নীরব ঘাতক। একবার এটি সনাক্ত করা গেলে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ওষুধ এবং প্রয়োজনে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দকে ধীর বা পুনরুদ্ধার করার জন্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিত্সা করা যেতে পারে।

মার্কিন জনসংখ্যায় অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের হার বাড়ছে: সিডিসি অনুমান করছে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১২ মিলিয়ন আমেরিকানদের অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন থাকবে।

মার্কাস বলেন, এ রোগে বয়স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে একটি, তাই জনসংখ্যার বার্ধক্যের সাথে এটি আরও সাধারণ হয়ে উঠছে।

অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনকে মহামারীটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, ধূমপান এবং অ্যালকোহল পানের মতো অন্যান্য কারণগুলোর সাথে স্থূলতাও এ রোগ বৃদ্ধির কারণ।

কিংস কলেজ লন্ডনের পুষ্টি ও ডায়েটিক্সের ইমেরিটাস প্রফেসর টম স্যান্ডার্স বলেন, আগের গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ কোমল পানীয় গ্রহণ অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন এর ঝুঁকির সাথে যুক্ত। তিনি নতুন গবেষণায় জড়িত ছিলেন না।

সম্ভাব্য 'অতিরিক্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি'

সার্কুলেশন: অ্যারিথমিয়া এবং ইলেক্ট্রোফিজিওলজি জার্নালে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এই গবেষণাটি ইউকে বায়োব্যাঙ্ক নামে একটি বৃহৎ, বায়োমেডিকাল ডাটাবেসে অংশগ্রহণকারী প্রায় ২ লাখ ২ হাজার মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। গড়ে ১০ বছর ধরে তাদের অনুসরণ করা হয়েছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বয়স ৩৭ থেকে ৭৩ বছর পর্যন্ত ছিলো। যাদের অর্ধেকেরও বেশি নারী।

গবেষণায় দেখা যায়, কৃত্রিমভাবে চিনি-মিষ্টিযুক্ত কোমল পানীয়ের পান করা কম বয়সী মহিলাদের ওজন বাড়া ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বেশি চিনিযুক্ত কোমল পানীয় পান করা কম বয়সী পুরুষদের মধ্যে ওজন বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের প্রবণতা বেশি ছিল।

বিবৃতি অনুসারে যারা চিনি-মিষ্টিযুক্ত পানীয় এবং বিশুদ্ধ জুস উভয়ই পান করেন তারা "যারা কৃত্রিমভাবে মিষ্টি করা পানীয় পান করেন তাদের তুলনায় মোট চিনির পরিমাণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল"।

গবেষণার প্রধান লেখক চীনের সাংহাই নবম পিপলস হাসপাতাল এবং সাংহাই জিয়াও টং ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক ড. নিংজিয়ান ওয়াং বলেন, একটি পানীয় আমাদের খাদ্যের জটিলতার কারণে আরেকটি পানীয়ের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে এবং কারণ কিছু লোক একাধিক ধরনের পানীয় পান করতে পারে। এ জন্য আমাদের গবেষণার ফলাফলগুলো নিশ্চিতভাবে উপসংহারে পৌঁছাতে পারে না।

তিনি বলেন, তবে, এই ফলাফলগুলোর উপর ভিত্তি করে কৃত্রিমভাবে মিষ্টি এবং চিনি-মিষ্টিযুক্ত পানীয় কমাতে বা এড়াতে সুপারিশ করি।

তিনি আরও বলেন, এটি কখনই ভাববেন না যে কম চিনি এবং কম-ক্যালোরিযুক্ত কৃত্রিমভাবে মিষ্টিযুক্ত পানীয় পান করা স্বাস্থ্যকর, এটি সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর