সেলফি তুলতে শেখালেন মোদি !

, আন্তর্জাতিক

সেন্ট্রাল ডেস্ক ৩ | 2023-08-29 11:32:26

"স্মার্টফোনটা ব্যবহার করি বেশ কিছুদিন ধরেই, কিন্তু এখনও ঠিক মতো ছবি তুলতে পারি না। সেলফি তোলার ব্যাপারটাও ঠিক আয়ত্তে আসেনি। সেটা দেখেই উনি আমার ফোনটা নিয়ে হিন্দিতে বললেন, 'সেলফি অ্যায়সে খিঁচা যাতা', অর্থাৎ এইভাবে সেলফি তুলতে হয়। তারপরে নিজেই তুলে দিলেন সেলফিটা," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন করিমুল হক। করিমুল পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজারে চা বাগানের একজন কর্মী। তার থেকেও বড় পরিচয়, তিনি 'অ্যাম্বুলেন্স দাদা।' আর যিনি করিমুলকে সেলফি কীভাবে তুলতে হয়, সেটা হাতে কলমে দেখালেন, তিনি আর কেউ নন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার যিনি অন্য ভারতীয় রাজনীতিকের থেকে অনেক আগেই রপ্ত করে ফেলেছেন। তাই সেলফিও যে কীভাবে তুলতে হয়, সেটাও তিনি অন্য অনেকের আগেই শিখে ফেলেছেন। শুক্রবার রাষ্ট্রপতি ভবনে আমন্ত্রিত ছিলেন ওই চাবাগান কর্মী, কারণ, ২০১৭ সালে তাকে 'পদ্মশ্রী' সম্মানে ভূষিত করেছে ভারত সরকার। 'পদ্মশ্রী', ভারতের বেসামরিক নাগরিকদের দেওয়া তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মান। করিমুল হককে ওই সম্মানে ভূষিত করার কারণটা লুকিয়ে আছে ওই 'অ্যাম্বুলেন্স দাদা' পরিচয়ের মধ্যেই। নিজের মোটরসাইকেলটাকে তিনি ব্যবহার করেন অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে। ধলাবাড়ি চা বাগান আর তার আশপাশের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় তার মোটরসাইকেলটাই মানুষের কাছে হাসপাতালে পৌঁছানোর একমাত্র উপায়। অনেক বছর আগে অসুস্থ মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য লোকের দরজায় দরজায় সাহায্য চেয়েও পাননি তিনি। চিকিৎসা পাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় তার মায়ের। তখন থেকেই করিমুল হকের মাথায় ছিল আর্ত মানুষকে নূন্যতম চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কী করা যায়, সেটা। প্রায় ১৪ বছর আগে চা বাগানের এক সহকর্মী কাজ করতে করতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখনই নিজের মোটরসাইকেলে চাপিয়ে, নিজের গায়ের সঙ্গে ওই অসুস্থ সহকর্মীকে বেঁধে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেন তিনি। তারপর থেকে কোনো অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার দরকার পড়লে নিয়মিতই তার ডাক আসতে শুরু করে। চা বাগানের কর্মী করিমুল হক হয়ে ওঠেন দুর্গম এলাকার ত্রাতা - অ্যাম্বুলেন্স দাদা। হাজার চারেক রুপি বেতন তার, তবুও পুরো কুড়ি গ্রামের মানুষের কাছ থেকে বাইক-অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কোনো অর্থ নেন না করিমুল হক। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ছাড়া তিনি গ্রামের মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসাও দেন। এই করিমুল হককে গতবছর পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। আর শুক্রবার, ২০১৮ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে সব 'পদ্ম' সম্মানপ্রাপ্তদের সঙ্গে করিমুল হককেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল দিল্লিতে। তারপরে, রাষ্ট্রপতি ভবনে ছিল আপ্যায়ন। হাজির ছিলেন রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীসহ আসিয়ান দেশগুলির প্রধানরাও। সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেলফি তুলতে চেয়েছিলেন করিমুল হক। "কয়েকবার চেষ্টা করলাম, হলো না। তখন প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখিয়ে দিলেন যে সেলফি কীভাবে তুলতে হয়। তারপরে রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও সেলফি তুলেছি," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন করিমুল হক। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে দেওয়া ছবিটি করিমুল হকের ফোনে নরেন্দ্র মোদির তুলে দেওয়া সেলফি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর