ভারতের লোকসভা নির্বাচনে পঞ্চম দফার ভোটের পরে গতবারের জেতা আসনগুলো দল ধরে রাখতে পারবে বলে আশাবাদী বিজেপি নেতৃত্ব। জবাবে দিনের শেষে কংগ্রেসের দাবি, পরিবর্তনের হাওয়ায় ভর করে অনায়াসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ফেলবে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া।’
কংগ্রেসের পক্ষে মঙ্গলবার (২১ মে) জয়রাম রমেশ বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার পর ৩৫০-এর বেশি আসন জেতার লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে ইন্ডিয়া জোট।’
প্রসঙ্গত, ছয়টি রাজ্য ও দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৪৯টি লোকসভা আসনে ভোট হয়েছে। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেশে ভোট পড়েছে ৬০.০৯ শতাংশ, যা পাঁচ বছর আগের পঞ্চম দফা লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে প্রায় ৩ শতাংশ কম।
যদিও নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, চূড়ান্ত ফলাফলে ভোটের হার কিছুটা বাড়বে।
মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুলা কেন্দ্রে ৫৬ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। উপত্যকাটিতে এতো মানুষের ভোট দিতে পথে নামা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে নির্বাচন কমিশন।
সর্বশেষ ১৯৮৪ সালে ৬১ শতাংশ ভোট পড়েছিল এই কেন্দ্রে। মঙ্গলবার পঞ্চম দফা নির্বাচনের পরে ভারতের ৪২৮টি কেন্দ্রের নির্বাচন শেষ হয়েছে। শেষ দুটি পর্বে ১১৫টি আসনের ভোটগ্রহণ বাকি রয়েছে।
ষষ্ঠ দফার ভোট হবে আগামী ২৫ মে। মঙ্গলবারের ভোট নিয়ে ঝাড়গ্রামের সভায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ শেষ হতে চলেছে। ইন্ডিয়া পাঁচ দফাতেই পরাস্ত হয়েছে। আগামী ৪ জুন আমাদের সরকার হবে। বিরোধীরা ধুয়েমুছে যাবে। বিরোধী জোটের হেরে যাওয়ার কাউন্টডাউন চলছে।’
মঙ্গলবার যে রাজ্যগুলোতে ভোটগ্রহণ হয়েছে, তার মধ্যে সব থেকে কম ভোট পড়েছে মহারাষ্ট্রে ৫৪.২৯ শতাংশ। ওই রাজ্যের ১৩টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ ছিল। যার মধ্যে ছিল মুম্বাইয়ের ছয়টি লোকসভা কেন্দ্র।
এদিকে, মহারাষ্ট্রে কম ভোট পড়ার জন্য বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে। তিনি বলেছেন, ‘যেখানে আমাদের ভাল ফল করার কথা, সেই কেন্দ্রগুলোতেই মেশিন খারাপ হয়ে গেছে। দেরি করে ভোটগ্রহণ হয়েছে।’
বিজেপির বিরুদ্ধে বুথ জ্যাম করার অভিযোগও তুলেছে উদ্ধব শিবির। তাদের বক্তব্য, বুথের ভিতরে ইচ্ছে করে দেরি করানো হচ্ছিল। এতে বহু ভোটার গরমের কারণে লাইনে দাঁড়িয়েও ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
উদ্ধবের অভিযোগ, ‘ওই কাজে নির্বাচন কমিশনও গেরুয়া শিবিরকে পূর্ণ মদত দিয়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের কাছে একাধিকবার পরিচয় পত্র দেখতে চাওয়া হয়েছে। হারের ভয়ে মোদি সরকার নির্বাচন কমিশনকে পাপোষের মতো ব্যবহার করছেন।’
উদ্ধবের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীস বলেন, ‘হারার ভয় থেকেই এসব কথা বলছেন উদ্ধব। ভোট দিতে যে সময় লাগছে, সেই অভিযোগ আমরাই প্রথম কমিশনকে জানিয়েছিলাম।’
মহারাষ্ট্রের সঙ্গেই মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশে যে ১৪টি আসনে ভোট হয়েছে, তাতে দল গতবারের মতোই ভাল ফল করবে বলে আশা করছে গেরুয়া শিবির। পাঁচ বছর আগে ১৪টি আসনের মধ্যে রায়বরেলি ছাড়া বাকি ১৩টি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। এবার সব কয়টি আসনেই দল জিতবে বলে আশা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজের কেন্দ্র রায়বরেলির একাধিক বুথ ঘুরে দেখেন রাহুল গান্ধী। বহু জায়গায় বিজেপি কর্মীরা তাকে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুললেও, রাহুল কোনও প্ররোচনায় পা দেননি।
তবে কিছু কেন্দ্রে বিজেপি কর্মীরা সাধারণ ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে রাহুল বলেন, ‘প্রথম চার দফায় স্পষ্ট হয়ে গেছে মানুষ সংবিধান ও গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে হারানোর পণ করেছেন। ঘৃণার রাজনীতি ছেড়ে মানুষ এখন আসল সমস্যার ভিত্তিতে ভোট দিচ্ছেন। জনতা এখন ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে নির্বাচনে লড়ছে। এতে দেশজুড়ে পরিবর্তনের ঝড় উঠেছে।’
রাহুলের সুর ধরে কংগ্রেসের নেতা জয়রাম রমেশও বলেন, দেশজুড়ে পরিবর্তনের ঝড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে হাওয়ায় ভর করে ৩৫০ আসন প্রাপ্তির দিকে এগোচ্ছে ইন্ডিয়া জোট।’
জয়রামের ভাষ্যমতে, ‘মোদির গদি ছাড়তে আর পনেরো দিন বাকি। বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব আর সংবিধান পরিবর্তনের হুমকি বিজেপির হারের কারণ হতে যাচ্ছে।’
জয়রামের ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘কার পক্ষে যে আসলে ঝড় রয়েছে তা ওই পনেরো দিন পরেই বুঝতে পারবেন ইন্ডিয়া-র নেতারা। দেশবাসী যে তাদের জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তা ভোটের ফল প্রকাশ হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।’