ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হবে আগামী ৪ জুন। তার ২৪ ঘণ্টা আগে বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতানেত্রীরা বৈঠকে বসতে চলেছেন। ভোটের ফলাফল অনুকূলে হবে ধরে নিয়েই এই বৈঠকের ডাক দিয়েছেন ডিএমকে নেতা তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন।
এনডিটিভি জানিয়েছে, আগামী ৩ জুন ডিএমকে’র প্রাণপুরুষ এম করুনানিধির ১০০তম জন্মদিন। ওই দিন সকালে স্ট্যালিন, বিরোধী মঞ্চের প্রত্যেক দলনেতাকে নয়াদিল্লিতে তাদের দলীয় দপ্তরে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
অন্য দলগুলোর পাশাপাশি সেখানে আমন্ত্রিত রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেখানে সব নেতা-নেত্রী নিজেদের মধ্যে কথা বলার পরিসর পাবেন।
তৃণমূল সূত্রে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বলা হয়েছে, ওই অনুষ্ঠানে তারা অবশ্যই যোগ দেবেন। তবে মমতার যাওয়ার সম্ভাবনা কম, তিনি প্রতিনিধি পাঠাবেন।
কংগ্রেস সূত্র জানিয়েছে, জোট রাজনীতিতে এই আগাম আলোচনার রেওয়াজ নতুন কিছু নয়। কোনও এক নেতা প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব নেন সকলকে একজোট করার।
ইউপিএ সরকার গঠনের সময় সিপিএম নেতা হরকিষেণ সিং সুরজিতের বাড়িতে ফলাফল ঘোষণার আগেও মিলিত হতেন কংগ্রেস, এনসিপি, আরজেডি’র শীর্ষ নেতারা।
তার আগেও চন্দ্রশেখর সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও এই রেওয়াজ দেখা গেছে। স্ট্যালিন নিজে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নেই, কংগ্রেসের জোট শরিক হলেও তার সঙ্গে অন্যান্য বিরোধী দলনেতাদের সম্পর্কও ভাল। তাই আপাতত প্রাথমিক আলোচনা শুরুর জন্য তিনিই আদর্শ ব্যক্তি, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
চলতি লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে জোট হয়নি কংগ্রেস এবং তৃণমূলের। কিন্তু আগামী ৩ জুন লোকসভার সমস্ত ভোটগ্রহন পর্বই শেষ হয়ে যাবে। ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে এক মঞ্চে থাকতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয় মমতার দলের।
রাজ্যসভার তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশের ভাদোহিতে তৃণমূলের সঙ্গে এসপি’র সফল জোটের কথা তুলে ধরেছেন। ওই লোকসভা কেন্দ্রের সব বিধায়ক এবং তৃণমূল প্রার্থী ললিতেশ ত্রিপাঠীকে নিয়ে বুধবার জনসভা করেছেন এসপি নেতা অখিলেশ যাদব।
সেই মঞ্চে ছিল তৃণমূলের প্রতীক এবং পতাকা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি, তাদের পতাকাও দেখা গেছে তৃণমূল প্রার্থীর মঞ্চে। ‘ইন্ডিয়া’র এই ঐক্যের ছবি নিজের এক্স-এ পোস্ট করেছেন অখিলেশ।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাল্টা পোস্ট করে ওই ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘একজোট থাকলেই আমরা স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকব।’
সম্প্রতি তৃণমূলনেত্রী বলেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া’ সরকার গড়লে তারা বাইরে থেকে সমর্থন করবেন। এটা নিয়ে পরে গুঞ্জন তৈরি হয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভাদোহিতে জনসভায় মমতাকে অখিলেশের ‘নতুন বুয়া’ হিসেবে উল্লেখ করে তার বাইরে থেকে সমর্থন তত্ত্বের উল্লেখ করেছিলেন। তিনি মানুষকে বোঝাতে চেয়েছেন, ‘ইন্ডিয়া’র মধ্যেও বিভাজন তৈরি হচ্ছে।
পরে মুম্বইতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে অবশ্য অস্বস্তি সামলাতে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, তৃণমূলনেত্রী পরে নতুন করে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন যে, তিনি জোটের ভেতরেই রয়েছেন। ফলে চিন্তার কোনও কারণ নেই। যদিও রাজনৈতিক শিবির বলছে, এখনও পর্যন্ত মমতা এই বিষয়টিকে স্পষ্ট করতে চেয়ে কোনও কথা বলেননি।
এই পরিস্থিতিতে লোকসভা ফলাফলের ঠিক আগের দিন নয়াদিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র নেতাদের জমায়েত হওয়া এবং তৃণমূলের সেখানে প্রতিনিধিত্ব করা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।