ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার (২৪ মে) বলেছেন, ঈশ্বর তাকে ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্য পূরণের জন্য পাঠিয়েছেন। যতো দিন না সেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে, ততো দিন পরমাত্মা তাকে ফিরিয়ে নেবেন না।
মোদির মন্তব্যের জেরে রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘মোদিকে পরমাত্মা পাঠিয়ে থাকলে কোভিডের সময় যখন গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসছিল, হাসপাতালের সামনে মৃতদেহ পড়েছিল, তখন তিনি থালা বাজাতে বলছিলেন কেন! যাকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন, তিনি বলেছিলেন, মোবাইল ফোনের আলো জ্বালাও। যাকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন, তিনি কেন শুধু আদানি, আম্বানীর মতো দেশের ২২ জন কোটিপতির জন্য কাজ করছেন?’
সম্প্রতি বারাণসীতে এক সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি এত প্রাণশক্তি কোথা থেকে পান? তিনি উত্তরে বলেন, ‘যত দিন মা বেঁচে ছিলেন, আমার মনে হতো বোধ হয় আমার জন্ম জৈবিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে। কিন্তু, মা চলে যাওয়ার পরে আমার অভিজ্ঞতা মিলিয়ে বলতে পারি, আমাকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন। সেই জন্যই এতো কাজের প্রাণশক্তি। কোনও কাজ আমাকে দিয়ে করানোর রয়েছে। সেই জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে।”
শুক্রবার একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে ৭৩ বছর বয়সি মোদি বলেন, ‘ঈশ্বর আমাকে ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারতের লক্ষ্য পূরণের জন্য পাঠিয়েছেন। আমার পূর্ণ বিশ্বাস, যতো দিন না সেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে, আমাকে পরমাত্মা ফিরিয়ে নেবেন না।’
প্রসঙ্গত, ২০৪৭-এ নরেন্দ্র মোদির বয়স হবে ৯৬ বছর।
বৃহস্পতিবার উত্তর-পূর্ব দিল্লির দিলশাদ গার্ডেনে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। দিল্লির ৭টি লোকসভা কেন্দ্রে শনিবার ভোটগ্রহণ। শুক্রবারই ছিল প্রচারণার শেষ দিন।
রাহুল জনতাকে প্রশ্ন করেন, তারা মোদীর সাক্ষাৎকার দেখেছেন কি না? উত্তর-পূর্ব দিল্লির লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী কানহাইয়া কুমারও সেখানে হাজির ছিলেন।
রাহুল বলেন, ‘কানহাইয়া যদি আমাকে এসে বিশ্বাস করে বলে যে ওর জন্ম জৈবিকভাবে হয়নি, ওকে পরমাত্মা পাঠিয়েছে, আমি কানহাইয়াকে হাত জোড় করে বলব, এইসব কথা তুই ভুল করেও বাইরে বলিস না। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী খোলাখুলি বলছেন, তার জন্ম জৈবিকভাবে হয়নি। তাকে পরমাত্মা পাঠিয়েছে। তার চামচারা বাহ, বাহ করছেন। যাকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন, তিনি কোভিডের সময় বলছেন, থালা বাজাও। যখন গঙ্গায় লাশ ভাসছে, হাসপাতালের সামনে মানুষ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করছে, তখন প্রধানমন্ত্রী এসে বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী নন, ঈশ্বর প্রেরিত।’
রাহুল আরও বলেন, ‘যাকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন, তার কাছে তরুণরা চাকরি চাইলে তিনি বলছেন, নালায় গ্যাস রয়েছে। সেই নালায় পাইপ ফেললে গ্যাস বের হবে। তাতে আগুন জ্বালিয়ে পাকোড়া বানাও। যাকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন, তিনি শুধু ২২ জন কোটিপতির জন্য কাজ করেন। শুধু আদানি ও আম্বানীর জন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন।’
রাহুল বলেন, ‘সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, ধনীরা কেন আরও ধনী হচ্ছেন? গরিবরা কেন আরও গরিব হচ্ছেন? মোদীজি ৩০ সেকেন্ড ভেবে উত্তর দিয়েছেন, তাহলে কি আমি সবাইকে গরিব করে দেব?’
এরপর রাহুল মজা করে বলেন, ‘হে পরমাত্মাজি, আপনি এ কেমন লোককে পাঠালেন?’
দিলশাদ গার্ডেনের প্রচারের পরে মেট্রো রেলে চেপে উত্তর-পশ্চিম দিল্লির মঙ্গলপুরীতে মহিলা সম্মেলনে যান রাহুল। পরে টুইট করে মনে করিয়ে দেন, দিল্লির মেট্রো রেল কংগ্রেসের আমলেই চালু হয়েছিল। প্রচারণার ফাঁকে অন্ধ্র ভবনের রেস্তরাঁয় গিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারেন।
মহিলা সম্মেলনে রাহুল অভিযোগ করেন, ‘বিজেপি নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রাখতে চায়। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে গরিব নারীদের বছরে এক লাখ টাকা করে অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দেন রাহুল।’
রাহুল বলেন, ‘নির্বাচনের আগে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে। নির্বাচনের পরে সিলিন্ডারের দাম বাড়লে কীভাবে সংসার চলবে?’