জিম্মিদের উদ্ধারে ছদ্মবেশে গাজায় ঢুকেছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দারা

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2024-06-14 16:37:15

গাজার নুসিরাত শরণার্থী শিবিরটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বেশ ভেতরে গাজার মাঝখানে অবস্থিত। ইসরায়েলি জিম্মিদের খুঁজে বের করতে এই শিবিরের কাছেই ছদ্মবেশে অবস্থান নিয়েছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দারা।

নিজেদের মেধা এবং প্রযুক্তির সমন্বয়ে সফলাতাও পেয়েছেন তারা। এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিবিরের অনেকগুলো বাজারের মধ্যে একটিতে ২৬ বছর বয়সি ইসরায়েলি নারী নোয়া আরগামানিকে জিম্মি করে রেখেছিল হামাস।

তখন আরগামানি এবং অন্য তিন জিম্মিতে উদ্ধার করতে একটি সাহসী অভিযান পরিচালনা করতে ওই ক্যাম্পে অনুপ্রবেশ করে ইসরায়েলি কমান্ডোরা।

উদ্ধারের দিন সকাল ১১টায় ইসরায়েলি সেনারা যে অ্যাপার্টমেন্টে আরগামানিকে আটকে রাখা হয়েছিল সেখানে ঢুকে ঘোষণা করে যে, ‘আপনাকে উদ্ধার করা হচ্ছে!’ ওই উদ্ধার অভিযানে আলমোগ মেইর জান, আন্দ্রে কোজলভ, এবং শ্লোমি জিভকে মুক্ত করা হয়।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিকল্পনা করে ছক এঁকে হাজার হাজার সেনা ও উন্নত প্রযুক্তিগত সহায়তার সমন্বয়ে ওই অভিযান সম্পন্ন করে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের গোয়েন্দারা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় জিম্মিদের সনাক্ত করতে ডিজিটাল ডেটা, ড্রোন ফুটেজ এবং যোগাযোগ ইন্টারসেপ্ট বিশ্লেষণ করে ওই অভিযানে সফলতা লাভ করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নুসেইরাতে জিম্মিদের অবস্থান নিশ্চিত করার পর ইসরায়েলি বাহিনী উদ্ধারের মহড়ার জন্য ভবনগুলোর বিশদ মক-আপ নির্মাণ করে।

প্রতিবেদন অনুসারে, এই প্রস্তুতিটি ১৯৭৬ সালের বিখ্যাত অপারেশন এন্টেবে’র অনুকরণে করা হয়। অভিযানের দিবালোকের সময় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েলের সামরিক কৌশলবিদরা এটিকে চমকে দেওয়ার সেরা সুযোগ বলে মনে করেছেন।

আইডিএফ চিফ অফ স্টাফ হার্জি হালেভি এবং অন্যান্য শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা একটি কমান্ড রুম থেকে ওই অভিযান পর্যবেক্ষণ করেন।

একটি বেসামরিক বাণিজ্যিক গাড়ির অনুকরনের একটি ট্রাক এবং আসবাবপত্র বোঝাই একটি সাদা মার্সিডিজসহ যানবাহনে ছদ্মবেশে বিশেষ বাহিনী লক্ষ্যবস্তুর কাছে পৌঁছে গিয়েছিল সেদিন।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রক্ষীদের বুঝতে না দিয়ে আরগামানিকে উদ্ধারে প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য জিম্মিদের উদ্ধারের সময় জটিলতা দেখা দেয়। কারণ, তখন গোলাগুলি শুরু হয় এবং গোপন অভিযানটি একটি পূর্ণাঙ্গ সংঘর্ষে রূপ নেয়।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ওই গোলাগুলির সময় ক্রসফায়ারে বেসামরিক নাগরিকসহ ২৭০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন।

উদ্ধারকৃত জিম্মিদের শেষ পর্যন্ত নিরাপদে নিয়ে যাওয়া হয় এবং মিশনের সাফল্যকে স্বাগত জানায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

ওই অভিযানের মাধ্যমে হামাসের হাতে আটক ২৫১ জনের মধ্যে ৭ বন্দিকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ইসরায়েলি বাহিনী।

গাজায় এখনো ১১৬ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ৪১ জন মারা গেছে বলে বিশ্বাস করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।

গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার ফলে ১,১৭৯ ইসরায়েলির মৃত্যু হয় এবং ২৫২ জনকে জিম্মি করা হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এরপর ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় গাজার ৩৭,২৩২ জনের বেশি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর