লড়াই থেকে সরে দাঁড়ালেন ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2024-06-27 16:54:53

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরি বাছাইয়ে দেশটিতে আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

শুক্রবার (২৮ জুন) এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তবে শেষ মুহূর্তে বুধবার (২৬ জুন) প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট গাজিজাদেহ হাশেমি।

ইরানের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়া ছয়জনের পাঁচজনই রক্ষণশীল, একজন সংস্কারপন্থী। এ ছয়জন হলেন-মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ, আমির-হোসেইন গাজিজাদেহ হাশেমি, সাঈদ জালিলি, মাসুদ পেজেশকিয়ান, মোস্তফা পুরমোহাম্মদি এবং আলিরেজা জাকানি।

৬২ বছর বয়সি মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ ইরানের একজন পরিচিত রক্ষণশীল নেতা। তিনি ২০২০ সাল থেকে দেশটির পার্লামেন্টে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছেন।

ইরানের উত্তর–পূর্বের নগরী মাশহাদের কাছে ১৯৬১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন গালিবাফ। রাজধানী তেহরানের মেয়রের দায়িত্ব পালনসহ তিনি সরকারি নানা পদে ছিলেন।

এর আগে ২০০৫, ২০১৩ ও ২০১৭ সালেও গালিবাফ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন। তবে শেষবার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে তিনি রাইসিকে সমর্থন দেন।

রাজনীতিতে আসার আগে গালিবাফ ইরানের অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৭ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তাকে রেভল্যুশনারি গার্ডের বিমানবাহিনীর প্রধান করেছিলেন। আর ২০০০ সালে পুলিশপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বাঘের গালিবাফের নাম ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১৯৯৯ সালের ছাত্র আন্দোলন কঠোর হাতে দমনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

৫৩ বছর বয়সি আমির–হোসেইন গাজিজাদেহ হাশেমি চরম রক্ষণশীল একজন নেতা। চিকিৎসক গাজিজাদেহ হাশেমি রাইসি সরকারের একজন কট্টর সমর্থক।

১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন গাজিজাদেহ হাশেমি। ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মার্টায়ার্স ফাউন্ডেশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

ইতিপূর্বে মাশহাদ আসন থেকে টানা চারবার পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন গাজিজাদেহ হাশেমি।

২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গাজিজাদেহ হাশেমি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।

গতকাল এক বিবৃতিতে গাজিজাদেহ হাশেমি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।


গাজিজাদেহ হাশেমি ছাড়া আরও একজন কট্টর রক্ষণশীল প্রার্থী হলেন ৫৮ বছরের সাঈদ জালিলি। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে তেহরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইরানের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন তিনি।

জালিলি ঘোর পশ্চিমাবিরোধী। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তিরও তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন তিনি।

১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাশহাদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন জালিলি। খামেনি তাকে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিলেন।

জালিলি ইরান-ইরাক যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। সামরিক বাহিনীতে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি একটি পা হারান।

২০১৩ সালে জালিলি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন। ২০১৭ সালে রাইসিকে সমর্থন দিয়ে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

এবারের প্রার্থীদের মধ্যে পেজেশকিয়ানই সবচেয়ে বয়স্ক এবং একমাত্র সংস্কারপন্থী প্রার্থী। ১৯৫৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া পেজেশকিয়ান একজন হার্ট সার্জন। ২০০৮ সাল থেকে টানা উত্তর–পশ্চিমের নগরী তাবরিজ থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন তিনি।

পেজেশকিয়ান বরাবর ইরানের বর্তমান শাসকদের সমালোচনা করে এসেছেন। ইরানের সাবেক সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

যে বছর (২০২১ সাল) রাইসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, সে বছর পেজেশকিয়ান অন্য সংস্কারপন্থী ও মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছিলেন।

২০২২ সালে তেহরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনার পর ইরানজুড়ে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল সে সময় রাইসি সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পেজেশকিয়ান।

৬৪ বছর বয়সি মোস্তফা পুরমোহাম্মদি এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা একমাত্র ধর্মীয় নেতা। রক্ষণশীল ও অভিজ্ঞ এ রাজনীতিক ১৯৫৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর কুমনগরে জন্মগ্রহণ করেন।

পুরমোহাম্মদি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও ছিলেন।

কট্টর রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন পুরমোহাম্মদি। আবার মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির আমলে বিচারমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন।

৫৮ বছর বয়সি আলিরেজা জাকানি কট্টর রক্ষণশীল রাজনীতিক। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে তেহরানের মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

১৯৬৫ সালের ২ এপ্রিল রাজধানী তেহরানে জন্ম নেওয়া জাকানি ইরাক-ইরান যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ২০২১ সালে তিনি রাইসির প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এর আগে ২০১৩ ও ২০১৭ সালে এ পদে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছিলেন তিনি।

জাকানি চার দফায় আইনসভার সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে তিনবার তেহরান ও একবার কুম থেকে নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু চুক্তির কড়া সমালোচনা করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর