শেষ সময়ে এসে বড় চমক দেখিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ফ্রান্সের বামপন্থি জোট নিউ পপুলার ফ্রন্টের (এনএফপি)। রাজনীতির জটিল সমীকরণ আর ১ম ধাপের ফলাফল পাল্টে দিয়ে এনএফপি জোট এখন সরকার গঠনের পথে। পরবর্তী ফরাসি প্রধানমন্ত্রীও হবেন তাদেরই মনোনয়নে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এনএফপি কাকে মনোনয়ন দেবে তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। তবে নানা অস্পষ্টতা সত্ত্বেও পরবর্তী ফরাসি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সামনে এসেছে জঁ-ল্যুক মেলঁশোঁর নাম। ফ্রান্সের বামপন্থি রাজনৈতিক আন্দোলন লা ফ্রঁস আঁসুমিজ-এর প্রতিষ্ঠাতা নেতা তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম দ্য পলিটিকো লিখেছে, এখন বড় প্রশ্ন হলো বামপন্থিরা কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেবেন। এ নিয়ে কার্যত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি নিউ পপুলার ফ্রন্ট।
অন্যদিকে, ১ম দফায় ভরাডুবির পরেও ২য় ধাপে বামজোটের জয়ের পেছনে রয়েছে সমন্বিত রাজনৈতিক কৌশল। প্রথম দফায় বাজিমাত করা ডানপন্থিদের ঠেকাতে ফ্রান্সের মধ্যপন্থি ও বামপন্থি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ। এরপর আপসের ভিত্তিতে বাম ও মধ্যপন্থি দলগুলোর প্রার্থীদের অনেকেই একে অন্যকে একাধিক আসন ছেড়ে দেন। এর ফলেই ডানপন্থিরা পিছিয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যা মাখোঁ গত ৯ জুন আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর সোশ্যালিস্ট (সমাজতান্ত্রিক), পরিবেশবাদী, কমিউনিস্ট ও কট্টর বামপন্থী দল ফ্রান্স আনবোয়েড পার্টি (এলএফআই) মিলে গঠন করে এনএফপি জোট।
বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, ফ্রান্সের পার্লামেন্টের ৫৭৭টি আসনের বামপন্থিদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট পেয়েছে ১৮২টি। এরপর ১৬৮টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মধ্যপন্থি জোট অনসম্বল অ্যালায়েন্স। আর কট্টর ডানপন্থি ন্যাশনাল র্যালি জয় পেয়েছে ১৪৩টি আসনে।
ফ্রান্সে সরকার গঠনের জন্য ২৮৯টি আসনের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে বাম জোটকে সরকার গঠনের জন্য অন্য দলের সমর্থন পেতে হবে। এ অবস্থায় ঝুলন্ত পার্লামেন্টে গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ফ্রান্সে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জোটসঙ্গীরা সেই অর্থে এখনো জোট গড়তে তুলতে পারেনি। ভোটের ফল ঘোষণার পর জোটের প্রতিটা দলই নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে আলাদা আলাদাভাবে উদযাপন করেছে। প্রতিটা দল ভিন্নভিন্ন ইভেন্টেরও আয়োজন করে। এসব অবস্থা দেখেই সংশয় তৈরি হয়েছে।
২০১৭ সালের ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৭২ বছর বয়সী জঁ-ল্যুক। ১৯৮৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের আইনসভার উচ্চকক্ষ সেনা-র সদস্য ছিলেন তিনি। ফ্রান্স আনবোয়েড পার্টির দীর্ঘদিনের নেতাও তিনি।
এনএফপি জোটের হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নাম এসেছে সোশ্যালিস্ট পার্টির অলিভিয়ার ফাউর, প্লেস পাবলিকের মধ্যপন্থি নেতা এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য রাফায়েল গ্লাকসমানেরও। তবে চূড়ান্ত ঘোষণার জন্য আপাতত থাকতে হচ্ছে অপেক্ষায়।
উল্লেখ্য, আনুষ্ঠানিক ফলাফল অনুযায়ী, বামপন্থি জোট নিউ এনএফপি নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। দ্বিতীয় হয়েছে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর মধ্যপন্থি জোট এনসেম্বল। আর তৃতীয় অবস্থানে আছে উগ্র ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র্যালি (আরএন)।