বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠানো প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জন্য একটি বিজয় এবং এটি দেশটিকে রাশিয়ার হামলা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। তবে, এগুলো দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা জন্য তাৎক্ষণিক একক সমাধান নয়।
যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস এবং ডেনমার্ক বুধবার (১০ জুলাই) বলেছে, বিমানগুলো হস্তান্তর শুরু হয়েছে এবং ইউক্রেন এই গ্রীষ্মে এফ -১৬ পরিচালনা করবে।
উল্লেখ্য, জেলেনস্কি বারবার রাশিয়ার আগ্রাসনের মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি যুদ্ধবিমানগুলোর জন্য চাপ দিচ্ছিলেন।
গত বছর প্রাথমিকভাবে স্থলভিত্তিক বিমান প্রতিরক্ষায় সম্পদের আরো ভাল ব্যবহার করার ওপর জোর দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত এফ-১৬ সরবরাহে সম্মত হয়।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র উপদেষ্টা মার্ক ক্যানসিয়ান বলেছেন, ‘একটি প্রতীকী প্রচেষ্টা হিসাবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এটি ছিল সত্যিই শেষ আইটেম, যা জেলেনস্কি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে জোর দিয়েছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, হাইমার্স রকেট লঞ্চার, প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স ব্যাটারি, আব্রামস ট্যাংক, এটিএসিএমএস (দীর্ঘপাল্লার) ক্ষেপণাস্ত্রের একটি সিরিজ অস্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে, যা ওয়াশিংটন দিতে অনিচ্ছুক ছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত কিয়েভকে সেসব দিতে সম্মত হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ক্যানসিয়ান বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে অস্ত্র প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে। আপনারা জানেন, এই অস্ত্র পাওয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে এর প্রভাব কী হতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি বিমান প্রতিরক্ষার জন্য সাহায্য করবে। তবে এটি তাৎক্ষণিক একক সমাধান নয়। আত্নরক্ষায় এগুলো যথেষ্ট হবে না।’
জেলেনস্কি গত মে মাসে এএফপির সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বিমান সমতা সুরক্ষিত করতে কিয়েভের অন্তত ১৩০টি এফ-১৬ প্রয়োজন। তবে পশ্চিমা দেশগুলো এখন পর্যন্ত ১০০ টিরও কম প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং সেগুলো একবারে আসবে না।’
প্রসঙ্গত, রাশিয়া ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অভাব কাজে লাগিয়ে বেসামরিক নাগরিক এবং অবকাঠামোর উপর ধ্বংসাত্মক হামলা চালায়। সেইসঙ্গে কিয়েভের সেনাদের সামনের সারিতে (ফ্রন্ট লাইনে) আঘাত হানায় কিয়েভ অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
হুমকির কথা তুলে ধরে বলা হয়, চলতি সপ্তাহের শুরুতে কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতালসহ দেশজুড়ে শহরগুলোতে রাশিয়ার কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৪০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।
যুদ্ধবিমানের অভাব ইউক্রেনের কার্যক্রমকেও বাধাগ্রস্ত করেছে। ২০২৩ সালের একটি দুর্বল পাল্টা আক্রমণের পরে কিয়েভ তার বাহিনীর অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতাকে সীমিত করার একটি প্রধান কারণ হিসাবে এটি উল্লেখ করেছে।
জেলেনস্কি এফ-১৬ হস্তান্তর করার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বিমানগুলো ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তিকে কাছাকাছি আনবে এবং প্রদর্শন করবে যে সন্ত্রাস সর্বত্র ব্যর্থ হবে।’
ক্যানসিয়ান বলেন, প্রধানত বিমান প্রতিরক্ষায় এগুলো ব্যবহারে পাশাপাশি ফ্রন্টলাইন সেনাদের সুরক্ষা এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে কয়েকটি বড় হামলায় ব্যবহার হতে পারে।
আরএএনডি কর্পোরেশনের বিমান ও সামুদ্রিক অধিগ্রহণ বিশেষজ্ঞ মাইকেল বোহনার্ট বলেছেন, এফ-১৬ হস্তান্তর ইউক্রেনের প্রতি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষণসহ এই বিমানগুলোর সরবরাহ এবং সহায়তা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া এবং এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি দেখানোর একটি বাস্তব, পরিমাপযোগ্য উপায়।
বোহনার্ট বলেন, এফ-১৬ ‘কিয়েভের আক্রমণে ব্যবহৃত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে ছুড়তে এবং এমন অঞ্চলগুলোকে রক্ষা করতেও সক্ষম হবে, যেখানে কোনো স্থলভিত্তিক ব্যবস্থা নেই।